৩৫ হাজার টাকায় ছাত্রলীগ নেতার হাত থেকে প্রাণে বাঁচেন রাশেদ
‘২০ লাখ টাকা না পেলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয় রনি। একপর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এ সময় বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে রনি। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে নগরীতে আমার সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে। তখন বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গেসঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই, সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই।’
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের এজাহারে নির্যাতিত রাশেদ মিয়া এভাবেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। রাশেদ মিয়া নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক।
রনি তাকে দুই দফায় পিটিয়েছেন। এর একটির সিসিটিভি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় মারধরের সময় এই টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়ে তিনি প্রাণে বাঁচেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানায় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিসহ দুইজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন রাশেদ।
অভিযোগের শুরুতে রাশেদ জানান, গত প্রায় আট বছর যাবৎ তিনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের জিইসি মোড় শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরা তার প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতেন এবং চাঁদা নিতেন।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিসে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় রাশেদ এতগুলো টাকা কোথা থেকে দেবেন বলে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে নুরুল আজিম রনি তাকে মারধর করেন।
এদিকে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিস কক্ষে সংঘটিত এই ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের পরিচালক রাশেদ মিয়াকে আঙুল তুলে শাসাতে ও টেবিল চাপরাচ্ছেন রনি। একপর্যায়ে রাশেদের গালে থাপ্পড় মারের তিনি। পরে চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করে বারবার রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন রনি। এর মাঝে চলতে থাকে তার উচ্চবাক্য। এভাবে প্রায় আড়াই মিনিট চলার পর কক্ষ ছেড়ে বের হয়ে যান রনি। কিছু মুহূর্ত পরেই ফিরে এসে আবারও তর্কে জড়ান রনি। পরে দীর্ঘ সময় কারও সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। পুরো ঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত রাশেদকে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, মারধরের এ ঘটনার প্রায় দুইমাস পর আবারও রনির নির্মম মারধরের শিকার হন রাশেদ মিয়া। গত ১৩ এপ্রিল রাশেদের সুগন্ধার বাসা থেকে মুরাদপুর যাওয়ার পথে মোহাম্মদপুর মাজার এলাকায় আবারও রনি ও তার সঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হন রাশেদ।
সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে এজাহারে রাশেদ লিখেছেন, ‘আসামিরা আমাকে একা পেয়ে টানাহেঁচড়া করে মুরাদপুর বুড়িপুকুর পাড় এলাকায় অফিসে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আগের মতোই ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বলি, এতগুলো টাকা আমি কেমনে দেব। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল আজিম রনি অফিসে থাকা হকিস্টিক দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে আমি মাথা সরিয়ে নেই। আঘাতটি আমার বাম কানে লাগে। মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমার বাম কানের শ্রবণশক্তি এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।’
‘এরপর ২ নম্বর আসামি হকিস্টিক দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় রনি আমাকে ২০ লাখ টাকা না পেলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এ সময় ১ নম্বর আসামি বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে আমার সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে। এ সময় বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গেসঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই, সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই। পরে তারা আমাকে মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম কলেজের গেটে ফেলে দিয়ে চলে যায়।’
এদিকে একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে তার মালিকানা আছে বলে দাবি করতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও এ কোচিং সেন্টারকে রনি নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।
জেডএ/জেআইএম