২৬ বছর ধরে রোগীর জীবন বাঁচাতে ছুটছেন তিনি

রবিউল এহ্সান রিপন
রবিউল এহ্সান রিপন রবিউল এহ্সান রিপন ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

একজন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে বা বাঁচাতে শুধু চিকিৎসকেরই ভূমিকা থাকে না। এতে জোরালো ভূমিকা রাখেন নার্স, অায়া ও ওয়ার্ড বয়রাও। তবে সবার শুরুতে অবদান থাকে একজন অ্যাম্বুলেন্স চালকের। তার কারণেই একজন আশঙ্কাজনক রোগীর দ্রুত চিকিৎসা করার সুযোগ পান চিকিৎসক ও নার্স। তাই জাগো নিউজের এবারের অায়োজন রোগীর জীবন রক্ষাকারী অ্যাম্বুলেন্স চালকদের নিয়ে।

সাইফুল ইসলাম পেশায় অ্যাম্বুলেন্স চালক। ২৬ বছর যাবৎ তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে মানুষের সেবা দিয়ে আসছেন।ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসাপাতালের এ অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে একান্ত আলাপ চারিতায় উঠে এসেছে না জানা অনেক কথা।

সাইফুল ইসলাম বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে করে যখন কোনো গুরুতর রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারি তখন একটি জীবন বাঁচানোর সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারায় এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাই। আবার যখন পথিমধ্যে কোনো রোগীর মৃত্যু হয় তখন নিজেকে ব্যার্থ মনে হয়।

১৯৯২ সালে অ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে ঠাকুরগাঁওয়ে আধুনিক সদর হাসপাতালে যোগদান করেন সাইফুল ইসলাম। হাসপাতালটি তখন ছিল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। কিন্তু তখন থেকেই আশপাশের তিন জেলার মানুষ এ হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল ছিল। গুরুতর কোনো রোগীকে দ্রুত অন্য হাসপাতালে পাঠানোর জন্য যার নামটি প্রথমে আসত তিনি হলেন অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুল ইসলাম। যেখানে যে অবস্থায় থাকতেন, সেভাবেই রোগী নিয়ে ছুটতেন জেলা শহরের বাইরের বড় কোনো হাসপাতালে। ২৬ বছর যাবৎ এভাবেই অবিরাম ছুটে চলছেন সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, নিজের সর্বচ্চটা দিয়েও যখন অ্যাম্বুলেন্সেই কোনো রোগীর মৃত্যু হয় তখন যে কষ্টটা পাই সেটা প্রকাশ করা যাবে না। তখন নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিই হয়তো আল্লাহ পাক আমার গাড়িতে ওই ব্যক্তির মৃত্যু নির্ধারণ করেছিলেন।

স্মৃতিচারণ করে বলেন, ২০০৪ সালে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকায় একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়। তখন হাসপাতালে একটাই অ্যাম্বুলেন্স। এখনকার মতো প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সও ছিল না। সেসময় আহত বেশির ভাগ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সারাদিন অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে নিয়ে গেছি। প্রায় সবাই উন্নত চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু দু'জন রোগীকে সঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় বাঁচাতে পারিনি। সেই মুহূর্তটা এখনও আমার মনকে নাড়া দেয়, ব্যাথিত করে।

thakurgao

দীর্ঘ চাকরি জীবনে প্রায় ১৫-১৬ হাজার রোগীকে আম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য বড় হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পেরেছি। অনেক সময় দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্য দুর্ঘটনার কবল থেকেও আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। দীর্ঘদিন আম্বুলেন্স চালিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাজাহান নেওয়াজ জানান, আমাদের এই হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট। আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ অসুস্থ হয়ে এখানে ছুটে আসেন চিকিৎসার জন্য। কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। আর সেই সময় অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুলই থাকে একমাত্র ভরসা।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. আবু মো. খায়রুল কবির জানান, অ্যাম্বুলেন্স চালক সাইফুল ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিচিত মুখ। তিনি ২৬ বছরের চাকরি জীবনে এই হাসপাতলেই বেশির ভাগ সময় ধরে কাজ করেছেন। ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করে রোগীর জীবন বাঁচাতে সর্বদা সচেষ্ট সে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।