ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা, কলকাঠি নাড়ছে প্রভাবশালীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:১৯ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০১৮

ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পরিচালিত প্রথম দিনের উচ্ছেদ অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। অভিযান শেষ না করেই ফিরে গেছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এমনটা ঘটেছে প্রভাবশালী মহলের ইশারায়। বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগরীর মতিঝর্ণায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসতি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন। এ সময় বসতি উচ্ছেদে বাধা দিয়েছে স্থানীয় লোকজন।

চট্টগ্রাম সদর সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকালে অভিযান শুরু হলে স্থানীয় লোকজন উচ্ছেদে বাধা দিতে চেষ্টা করে। অথচ আমরা এসেছি তাদের বাঁচাতে, পাহাড় ধসে তাদের প্রাণহানি ঠেকাতে এবং নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য। ’আব্দুল্লাহ আল মনসুর বলেন, ‘স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের উসকানিতে তারা অভিযানে বাধা দিয়েছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে।’

Pahar-ctg-1

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি ঘর উচ্ছেদের পর অভিযান বন্ধ করতে বাধ্য হন। বিক্ষোভে নারীদের সামনে দেখা গেছে। উচ্ছেদে দায়িত্বরত পুলিশের নারী কনস্টেবলদের সঙ্গে তারা বাকবিতণ্ডা করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অভিযানে পাহাড়ের খাদে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ১০ থেকে ১২টি বাড়ির স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। প্রায় ১৫টি বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ১১টি পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে লালখান বাজারে মতিঝর্ণা ও ওয়াসার টাংকির পাহাড়। সেখানে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে চূড়া পর্যন্ত সিঁড়ির ন্যায় পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এ টাংকির পাহাড়ে রয়েছে দ্বিতল ভবনও। দুই থেকে আড়াই ফুট সরু সুরঙ্গের মতো চলাচলের পথ রেখেই এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ পাহাড়ে গড়ে উঠেছে তিন হাজারেরও বেশি পরিবারের আবাসস্থল। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সব ধরনের উপযোগিতা বিদ্যমান থাকায় এ পাহাড় ছেড়ে কেউ অন্যত্র যেতে চায় না। কম ভাড়ার কারণে এখানে বসতি ক্রমেই বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা জানিয়েছেন, প্রশাসন তাদের সরে যেতে বলে, কিন্তু পরক্ষণেই জমিদারের কেয়ারটেকার বা জমিদার নিজেই হুমকি দেয়।

Pahar-ctg

অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। প্রভাব খাটিয়ে সেখানে দেয়া হয় সরকারি নাগরিক সেবা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের সময় এসব বাড়িঘরের মূল মালিকরা আগেই সটকে পড়েন। পরে রাজনৈতিক নেতাদের ইন্ধনে আবারও বসত শুরু করেন। ভাড়াটিয়ারাও যেহেতু ভূমিহীন অসহায় এবং কম টাকায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পান, তাই তারা ঝুঁকি জেনেও উচ্ছেদের পরও বারবার ফিরে আসেন। তাছাড়া প্রায় সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে বাধা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

উল্লেখ্য, আসন্ন বর্ষাকাল ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা বিবেচনা করে চট্টগ্রাম মহানগরসহ সব উপজলায় পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদশে অবৈধ বসবাসকারীদের আগামী শনিবারের (১৫ এপ্রিল) মধ্যে উচ্ছেদ করতে ছয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

আবু আজাদ/ওআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।