ক্ষমা করে দিও বাবা...
বাবা রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নিখোঁজ হয়েছে এই খবরটি প্রথমে হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা প্রচার মাধ্যমে নিয়ে আসে। সে সংবাদ জানতে পেরে ফেসবুকে ‘স্ট্যাটাস’ দিয়েছিলেন ছেলে দীপ্ত ভৌমিক। লিখেছেন, ‘সাধ্য অনুযায়ী যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’
স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে আপলোড হয়েছিল নিখোঁজ সংবাদের চতুর্থ দিন সোমবার দুপুর ৩টা তিন মিনিটে। তখনও খোঁজ মেলেনি দীপ্তর প্রাণপ্রিয় বাবা রথীশের।
আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের একমাত্র ছেলে দীপ্ত ভৌমিকের ‘স্ট্যাটাসটি’ ছিল হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মত। তখনও দীপ্ত জানতো না তার প্রিয় বাবার হত্যাকারী তারই গর্ভধারিণী মা স্নিগ্ধা সরকার দিপা।
সবাইকে কাঁদিয়ে মায়ের ‘পরকীয়া প্রেমের’ বলি হওয়া রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নিথর দেহ মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল হত্যাকারীরা। চিতাভস্ম রথীশ এখন সন্তান আর প্রিয়জনের কাছে স্মৃতি।
ওই ঘটনার পর যখন প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের সব ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে রথীশ চন্দ্র ভৌমিক তারই স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা আর পরকীয়া প্রেমিক শিক্ষক কামরুল ইসলাম জাফরীর হত্যার শিকার।
এমন অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত খলচরিত্রের স্বয়ং মা নিজেই। তাই বেদনায় নীল দিপার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি সন্তান দীপ্ত ভৌমিকের। যা বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রকাশ করেছেন।
দীপ্ত ভৌমিক তার ফেসবুকে আইডিতে চারটা শব্দেই যেন অনেক না বলা কথা বলা হয়ে যায়, এমন অশ্রুসিক্ত বাক্যই লিখেছেন বাবু সোনার ছেলে। বলেছেন, ‘ক্ষমা করে দিও বাবা...’।
পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনার মরদেহ উদ্ধারের পর বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে দীপ্ত ভৌমিক নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত বুধবার ওই স্ট্যাটাসটি লিখেছেন তার ফেসবুকে।
একইসঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করছেন তিনি। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এ দাবি করেন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আইনের শিক্ষার্থী দীপ্ত ভৌমিক।
দীপ্ত বলেন, অপরাধী কখনও আমার মা হতে পারে না। অপরাধী অপরাধীই, সে যেই হোক না কেন। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমি আমার বাবার খুনিদের ফাঁসি চাই।
বাবার হারানোর শূন্যতা বুকে নিয়ে দীপ্ত আরও বলেন, সব পরিবারেই তো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে ঝগড়া হয়। আমাদের পরিবারেও হতো। কিন্তু আবার তা সমাধানও হয়ে যেত। কিন্তু মা অন্যের সহায়তায় যেভাবে বাবাকে খুন করেছে, তা মেনে নিতে পারি না।
তিনি বলেন, বাবা বলতেন, মানুষের সেবা করাই বড় ধর্ম। ভাবতেও পারিনি সহজ-সরল বাবার এমন পরিণতি হবে। সুন্দর সাজানো একটি সংসার তছনছ হয়ে যাবে।
দীপ্ত বলেন, বাবা বলতেন, তুমি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করে উকিল হও। সাধারণ মানুষের সেবা কর। তার ইচ্ছায়ই আমি আইন বিষয়ে লেখাপড়া করছি।
উল্লেখ্য, চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী ছিলেন রথীশ চন্দ্র ভৌমিক (বাবু সোনা)।
গত ৩০ মার্চ রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল তিনি নিখোঁজ হয়েছেন। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মিডিয়ার কাছে বক্তব্য দেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধা সরকার দিপা।
এরপর বিভিন্ন সংগঠন নিখোঁজ রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনাকে উদ্ধারে মানববন্ধন, সমাবেশ, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচিতেও সরব উপস্থিতি ছিল দিপার প্রেমিক কামরুল।
আন্দোলন জোরালো হবার আগেই কোমর বেঁধে মাঠে নামে র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। অবশেষে তারা মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে ‘পরকীয়ার’ বলি রথীশের মরদেহ উদ্ধারে সক্ষম হয়।
পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক হত্যা মামলায় স্ত্রী দীপা ভৌমিক, রথীশের ব্যক্তিগত সহকারী (গাড়িচালক) মিলন মহন্ত স্কুলছাত্র সবুজ ও রোকন কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে প্রেমিক কামরুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এএম/আরআইপি