সাত বছর আগে হারানো মেয়েকে খুঁজে দিলো জাগো নিউজ
‘পাগলির প্রেমে পাগল খলিল, অবশেষে বিয়ে’ শিরোনামের একটি সংবাদই মুছে দিলো একটি পরিবারের দুঃখের গ্লানি। নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলো পরিবারকে। স্বপ্নটা হলো, হারিয়ে যাওয়া একজন স্বজনকে ফিরে পাবার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভোর পরিবারের সকলেই। কখন দেখবো হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে, কখন তাকে কাছে পাবো, এমন অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলো সবাই।
এর আগে গত ২ এপ্রিল পারভিন ও খলিলের বিরল এই ভালোবাসার গল্প তুলে ধরে ‘পাগলির প্রেমে পাগল খলিল, অবশেষে বিয়ে’ শিরোনামে একটি সংবাদটি প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এতদিন যে মানুষটিকে হন্য হয়ে খুঁজেও পাওয়া যায়নি, সেই মানুষটির খোঁজ পাওয়া গেল একটি অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদে। এ যেন অবিশ্বাস্য ঘটনা। তেমনি এক অবিশ্বাস্য ঘটনা সত্যতে পরিণত হয়েছে রাঙামাটিতে। সংবাদের সূত্র ধরে হারিয়ে যাওয়া মানসিক প্রতিবন্ধী এক নারীকে সাত বছর পর খুঁজে পেয়েছে তারা স্বজনরা।
এরই সূত্র ধরে শুক্রবার বিকেলে মানসিক ভারসাম্যহীন পারভিনের স্বজনরা ছুটে আসে রাঙামাটিতে। স্থানীয় প্রশাসনকে পর্যাপ্ত প্রমাণাদি দেখি তারা নিয়ে গেছে পারভিনকে। একই সঙ্গে নিয়ে গেছে তাদের জামাই খলিলকে। পাঁচ বছর ধরে খলিল ও পারভিন একটি যাত্রী ছাউনির নিচে সংসার করছিল।
ভাগনিকে পারভিনকে পেয়ে মামা শফিকুল রহমান অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, গত বুধবার হঠাৎ জাগোনিউজ২৪ডটকমে
‘পাগলির প্রেমে পাগল খলিল, অবশেষে বিয়ে’ শিরোনামের সংবাদটি তিনি দেখে। সেখানে প্রকাশিত ছবির সঙ্গে তার হারিয়ে যাওয়া ভাগনির মিল খুঁজে পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি এই সংবাদ পাঠান তার বোনের কাছে (পারভিনের মা)। সংবাদের প্রকাশিত ছবির সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া মেয়ের মিল দেখে চিহ্নিত করা হয় এটাই তাদের সাত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে পারভিন।
এরপর শুক্রবার তারা রাঙামাটিতে আসেন এবং খুঁজে বের করেন পারভিনকে। পরে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী পুলিশ চেকপোস্টের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সত্যতা যাচাই করে হারিয়ে যাওয়া মেয়ে পারভিনকে বুঝিয়ে দেয়া হয় তার সাত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মা ও ভাইয়ের কাছে। এসময় স্বামী ছাড়া পারভিন বাপের বাড়ি যাবে না বলেও বায়না ধরে সকলের সামনে। পরে তার স্বামী খলিলকেও নিয়ে গেছে তারা।
পারভিনের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার দক্ষিণ পেরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত রস্তম আলী, মা রশিদা বেগম। তারা দুই বোন ও এক ভাই। ভাই বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে চাকরি করে আর বড় বোনের চট্টগ্রামে বিয়ে হয়েছে অনেক আগেই।
হারিয়ে যাওয়ার আগে থেকেই মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলো পারভিন। ২০১১ সালে চট্টগ্রামের ঈদগাঁ এলাকায় বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল পারভিন। মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে সেখানেই রাখা হয়েছিল। কিন্তু একদিন সে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি।
এভাবেই সাতটি বছর কেটে গেছে। পারভিনের মা মনে করেই নিয়েছিল আর হয়তো খুঁজে পাবে না মেয়েকে। কিন্তু সাত বছর পর মেয়ের সংবাদ দেখে মায়ের মন কোনো বাধায় মানেনি। রাঙামাটিতে ছুটে এলেন মেয়ের খোঁজে। পারভিনও প্রথম দেখায় চিনে নিয়েছে তার গর্ভধারিণী মাকে।
সাত বছর পর মা-মেয়েকে এবং মেয়ে-মাকে পেয়ে আত্মহারা। সেই দৃশ্য দেখার সুযোগ হয়েছে এই প্রতিবেদকেরও। তিনি কথা বলেন, পারভিনের সঙ্গে। পারভিন বলেন, ‘ইনিই আমার মা। আমি আমার মাকে চিনি। আমি স্বামী নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাড়ি যাবো।
পারভিনের মা রশিদা বেগম বলেন, ‘আব্বা গো আমি কোনদিনও ভাবি নাই মাইয়াটারে খুঁইজা পামু, তার বাপে মারা গেছিলে সে কবেই। পুলা-মাইয়াগুলোরে অনেক কষ্টে মানুষ করছি। হঠাৎ আল্লাহ আমাদের কি বিপদটাই না দিলো, ছোট মাইয়াটা পাগল হয়ে গেছে, মাইয়াটা বেড়াইতে আইছিলো তার বোনের বাড়িত, সেখান থেইকা পালাইয়া গেলো। গত সত বছর ধইরা আমি তারে কত জায়গাই না খুঁইজা বেড়াইছি। পরে ভাইবা নিছি মাইয়াটা মইরা গেছে হয়তো। আমার ছোটভাই হঠাৎ ফোন দিয়ে কইলো পারভিনরে পাইছি বুবু। তার কথা হুনার পরে আমি আমার মাইয়াটারে নিতে আইছি বাপজান।’
পারভিনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল শারীরিকভাবে অসুস্থ খলিল। পাঁচ বছর ধরে তারা সংসার করে আসছিলো। ভালোবাসার মানুষ নিজ পরিবারকে ফিরে পাওয়ায় খুশি খলিলও।
তিনি বলেন, আমি অনেক খুশি, পারভিন তার মা-ভাইরে খুঁইজা পাইছে। আমিও অনেক চেষ্টা করছি তার মা-বাবারে খুঁজতে। কিন্তু পাই নাই। এখন সে তার মা, ভাই, বোনের সঙ্গে দেখা করবো এটাই আমার জন্যে পরম শান্তির। জাগো নিউজকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবেদক যদি এমন সংবাদ না দিতো তবে পারভিন তার মা-ভাইরে খুঁইজা পায় তো না।
অবশেষে সাত বছর পর হারিয়ে যাওয়া পারভিন ফিরে গেলো তার বাড়িতে। নিয়ে গেলো অসুস্থ স্বামী খলিলকেও।
এমএএস/পিআর