একটি প্রেমের বিয়ের করুণ মৃত্যু
প্রথম পরিচয়টা তাদের মোবাইলে। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রতিনিয়ত কথা হতো তাদের। এক পর্যায়ে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে। সেই ভালোবাসা থেকে সিদ্ধান্ত নেয় দুজনে বিয়ে করবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবারের কাউকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলে তারা। পরিচয়, প্রেম এবং বিয়ে পর্যন্ত সব কিছুই ভালো ছিলো তাদের। বাকিটা পড়ুন সংবাদটির নিচের অংশে।
এর আগে তাদের পরিচয়টা জানা দরকার। তারা হলেন, প্রেমিকা মনোয়ারা পারভীন (২৩) ও সিয়াম হোসেন (২৮)। পারভীনের বাবার নাম মনির হোসেন। তিনি পরিবারসহ ঢাকার শাহীনবাগের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেখানে তিনি একজন বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানেই তার মেয়ে মনোয়ারা পারভীনের সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয় সিয়াম হোসেনের।
উপরের অংশটুকু পড়লে কেউ আঁচই করতে পারবে না মনোয়ারা ও সিয়াম সম্পর্কের শেষ পরিণতি কি দাঁড়িয়েছে? জানলে হয়তো অবাকই হবে সবাই, শুক্রবার সকালে সেই প্রেমিক স্বামীর হাতে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন মনোয়ারা। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সাত মাসের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটল।
সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের প্রশিকা মোড় এলাকায় আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার (রেজু মিয়া) ভাড়া বাড়িতে ছুরি (এন্টিকাটার) দিয়ে স্ত্রীর গলাকেটে পালিয়ে যায় স্বামী সিয়াম। দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তবে কি কারণে হত্যার মতো ঘটনা ঘটলো এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারেনি পারভীনের স্বজনরা।
নিহত মনোয়ারা শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামের মনির হোসেনের মেয়ে। অভিযুক্ত সিয়াম হোসেনের বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেনি মনোয়ারার স্বজনরা।
নিহতের স্বজনেরা জানান, প্রায় দুই বছর আগে তাদের পরিবার ঢাকায় বসবাস করার সময় মোবাইল ফোনে সিয়ামের সঙ্গে মনোয়ারা পারভীনের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে পরিবারটি ঢাকা থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিম খণ্ড গ্রামে এসে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার (রেজু মিয়া) দুটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এরপরও সিয়াম মনোয়ারার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। পরে গত ৭ মাস আগে সিয়াম মনোয়ারাকে গোপনে বিয়ে করে। বিয়ের বিষয়টি অবশ্য মনোয়ারার পরিবারের লোকজন জানতে পারে। পরে তারা মেনেও নেয়।
বিয়ের পর থেকেই মনোয়ারা তার স্বামীকে নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে বসবাস শুরু করে। পরে মনোয়ারা পার্শ্ববর্তী মারিয়া ফ্যাশনের টাইম কিপার ও সিয়াম বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রিমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিক লিমিটেড কারখানায় অফিস সহায়ক পদে চাকরি নেয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কারখানা থেকে এসে স্বামী-স্ত্রী রাতের খাবারের পর একসঙ্গে ঘুমাতে যায়। পরে বেলা ১১টায় স্বজনেরা তাদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরে ঢুকে পারভীনের গলাকাটা নিথর দেহ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেয়। ঘটনার পর থেকেই স্বামী সিয়াম পলাতক রয়েছে।
নিহতের বড় ভাই রমজান আলী জানান, দুজনের ভালোবাসার কথা জেনেই আমরা পারিবারিকভাবে বিয়ে মেনে নিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। এরপরই কয়েকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। আমরা তা পারিবারিকভাবে মিটিয়েও দিয়েছিলাম।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান জানান, খবর পেয়ে দুপুরে লাশ উদ্ধার করে ময়ানতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত সিয়াম পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন।
শিহাব খান/এমএএস/পিআর