১০ বছরের শিশুর কাঁধে জোড়াখুনের মামলা!
মায়ের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ আদালতে এসেছিল ১০ বছরের শিশু মো. আব্দুল্লাহ। একটি চাঞ্চল্যকর জোড়া খুন মামলার আসামি হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যায় সে। এ সময় তাকে ঘিরে মানুষের জটলা দেখা দেয়। ২২ বছর বয়স দেখিয়ে তাকে আসামি করা হয় একটি জোড়া খুনের মামলার। অবশেষে আদালতের নির্দেশে আপাতত জামিনে মুক্তি পেয়েছে শিশুটি।
অন্য আসামিদের সঙ্গে আব্দুল্লাহ বুধবার দুপুরে আমল গ্রহণকারী ৪নং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আনিছুল ইসলাম আব্দুল্লাহকে শিশু আদালতে পাঠান। পরে শিশু আদালতের বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শাহজাহান কবীর পুলিশ রিপোর্ট না দেয়া পর্যন্ত শিশুটির জামিন মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের চারিগ্রাম গ্রামের মো. ফরিদ মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল্লাহ। স্থানীয় একটি মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সে। ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম সনদ অনুসারে তার জন্ম ২০০৮ সালের পহেলা মে। সে হিসেবে তার বয়স দশ বছরেরও কিছু কম। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স দেখানো হয় ২২ বছর।
গত বছরের ৯ই নভেম্বর দুপুরে খালে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে মিঠামইনের চারিগ্রামে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সময় তিন সহোদরসহ উভয় পক্ষের পাঁচ ব্যক্তি নিহত হয়।
এই পাঁচ খুনের মধ্যে রাজিব ও মুকুল হত্যার ঘটনায় রাজিবের বাবা সুজন মিয়া বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৮৬ জনকে আসামি করে মিঠামইন থানায় ১৫ই নভেম্বর হত্যা মামলা রুজু করেন। এতে শিশু আব্দুল্লাহর বয়স ২২ বছর দেখিয়ে তাকে ৭৫ নম্বর আসামি করা হয়। তার বড়ভাই বাশারুল মিয়াও (৩২) এ মামলার আসামি।
বুধবার শিশুটি প্রথমে মামলার অপর ৬ আসামি বড়ভাই বাশারুল মিয়া, তৈয়ব মিয়া (৫০), হাসান মিয়া (২৪), মো. মুতাব্বীর (৪৮), মস্তু মিয়া (৪০) ও ইব্রাহিম মিয়ার (৩৫) সঙ্গে আমল গ্রহণকারী আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আনিসুল ইসলাম আব্দুল্লাহকে শিশু আদালতে পাঠিয়ে অপর ৬ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শিশু আদালত আব্দুল্লাহর জামিন মঞ্জুর করেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে জেলা জজকোর্টের পিপি অ্যাড. শাহ আজিজুল হক জানান, এটি অমানবিক। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বয়স বেশি দেখিয়ে শিশুটিকে আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগপত্র দেয়ার সময় পুলিশ তাকে আদালতে ‘নট সেন্টআপ’ (অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া) করলেই সে মামলার অভিযোগ থেকে রক্ষা পাবে বলেও জানান এ অাইন কর্মকর্তা।
নূর মোহাম্মদ/এফএ/আরআইপি