পঞ্চগড়ে বিদেশি ফুল চাষে সাফল্য
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরীক্ষামূলক বিদেশি জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছে মেটাল এগ্রো লিমিটেড নামে দেশিয় একটি বীজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশি ফুল চাষে দেশের বিভিন্ন এলাকার নার্সারি মালিক ও ফুল চাষীদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
গ্রীষ্মকালীন সময়ে দেশে ফুলের চাহিদা বিবেচনায় বিদেশি জাতের ফুল চাষ নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংটিহাজরা ডাংগা ইউনিয়নের কাউয়াপুকুর গ্রামে মঙ্গলবার ফুল চাষের মাঠ প্রদর্শনী ও মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি জাপানের বিখ্যাত ‘টাকি সিড’কোম্পানি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বীজ ও চারা এনে ওই এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে।
মতবিনিময় সভার আয়োজকরা জানান, দেশে প্রতিনিয়ত ফুলের চাহিদা বাড়ছে। এখানে মূলত শীতকালে কিছু প্রজাতির মৌসুমি ফুল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফুলের চাহিদা মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চীন, জাপান, মালেয়শিয়া, থাইল্যান্ডের মত দেশ থেকে ফুল আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশেও গ্রীষ্মকালের বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুলচাষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ আকারে এ ফুলচাষ করা গেলে বিদেশেও ফুল রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আমাদের এখানে দেশিয় ফুলের খুব বেশি জাত নেই। দেশিয় বাজারে কয়েক প্রজাতির গোলাপ, গাদা, জবা, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধাই আমাদের ভরসা। অথচ বিশ্ব বাজারে বছর জুড়েই নানান প্রজাতির ফুল বাজারজাত দেখা যায়।
যে কারণে পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার ফুলচাষী এবং নার্সারি মালিকদের বিদেশি প্রজাতির ফুল চাষে আগ্রহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি।
ইতোমধ্যে তারা জাপানের বিখ্যাত ‘টাকি সিড’থেকে উন্নত প্রজাতির ফুলবীজ আমদানি করে তা থেকে ফুল উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেছে। তাদের প্রদর্শনী প্লটে শোভা পাচ্ছে বিদেশি প্রজাতির রং বেরংয়ের রকমারি ফুল। ভিনদেশি এসব ফুলের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক জাপানী ডাইয়েনতাস, এস্টার, মেথিউলা, এন্টিরিনাম, কেবেজকাট ফ্লাওয়ার, স্যালভিয়া, ভিইওলাসহ ১২০ প্রজাতির ফুল চাষ করে সফল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশপাশি অতিথি অভ্যর্থনার জন্য ব্যবহৃত জাপানি জাতের বিভিন্ন স্টিকের চাষও করা হচ্ছে। তবে এসব ফুলের বিদেশি নামের পরিবর্তে নন্দিনী, মিথিলাসহ দেশিয় সহজে উচ্চারণযোগ্য নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আগামী শীত মৌসুমে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ দেশের ১০ জেলায় ফুল চাষীদের মাঝে এ ফুলের বীজ ও চারা সরবরাহ করা হবে। ফুল উৎপাদনসহ বাজারজাতকরণেও সহযোগিতার কথা জানায় মেটাল এগ্রো।
প্রতিষ্ঠানটি আশা প্রকাশ করেন, এ ফুলের চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ জন্য পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলচাষী ও নার্সারি মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
বিদেশি ফুল চাষ প্রকল্পটির কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ড.হেইদি ওয়ারনেট এ ফুলচাষ প্রকল্পটি দেখভাল করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও এশিয়া মহাদেশে ৩০ বছর ধরে ফুল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া চীনে ২২ বছর ধরে ফুল চাষের ওপর কাজ করেছেন। বর্তমানে ইউএসএআইডির হয়ে মেটাল এগ্রো লিমিটেডের কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুল বিশেষজ্ঞ ড. হেইদি ওয়ারনেট বলেন, বাংলাদেশের এ অঞ্চল ফুল চাষে বেশ উপযোগী। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফুল চাষে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং দেশিয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হবে। চীনে এ ফুল চাষে সময় লেগেছে প্রায় ২০ বছর। তবে বাংলাদেশে ঠিকমত এই ফুলচাষ করা গেলে পাঁচ বছরে মধ্যেই সাড়া ফেলবে আশা করি।
মতবিনিময় সভায় যশোর, বরিশাল, নাটোর, রাজশাহী এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার ফুলচাষী ও নার্সারি মালিক ছাড়াও ইউএসএআইডির অনিরুদ্ধ হোম রায়, জাপানের টাকি সিডের প্রতিনিধি নোরিকাজু সাতোইওসি অংশ নেন। এ সময় জাপানী ফুল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ফুল চাষী ও নার্সারি মালিকদের সহায়তার আশ্বাস দেন মেটাল এগ্রো লিমিটেড।
মেটাল এগ্রোর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হুসাইন বলেন, বাংলাদেশে শুধুই শীতকালে কিছু ফুল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে বিদেশ থেকে ফুল আমদানি করতে হয়। দেশে গ্রীষ্মকালে ফুলের চাহিদা মেটাতে আমাদের এ উদ্যোগ। বর্তমানে যশোর, চট্টগ্রাম ও সাভারে ছোট পরিসরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে দেশিয় ফুল চাষ করা হচ্ছে। যা দেশের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। তবে দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ফুল চাষের জন্য উপযোগী। আমরা বছর জুড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বলেন, কৃষকরা ধান পাটসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেও অনেক সময় লোকসানে পড়েন। আমরা জাপানের টাকি সিড থেকে ফুলের বীজ আমদানি করছি। এই ফুল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নার্সারি মালিক ও ফুল চাষীদের আমরা বিভিন্নভাবে সহায়তার চেষ্টা করছি। আশা করি কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজার রফতানি করা যাবে।
সফিকুল আলম/আরএ/আরআইপি