মুন্সীগঞ্জে বেগুনের কেজি ৪০ টাকা
মাটির উর্বরতার কারণে মুন্সীগঞ্জের সর্বত্র বেগুন চাষ বেশি হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলের বেগুনের আবাদ হয়ে থাকে। যা স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হয়।
চলতি মৌসুমে জেলার ১৯৫ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হয়। এরপরও স্থানীয় বাজারে বেগুনের দাম সর্বদা চওড়া থাকে। শুধু বেগুন নয় প্রতিনিয়তই উচ্চমূল্যে সবজি কিনতে হচ্ছে স্থানীয় বাজার থেকে।
মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ সদরের বড় বাজার, মুন্সীরহাটসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখানে বেগুনের দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বেগুনের দাম ২ টাকা হলেও এখানে বেগুনের কেজি ৪০ টাকা।
তবে, কৃষি বিপণন অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জে বেগুনের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য দেখানো আছে কেজি প্রতি ২৬-৩০ টাকা। বর্তমানে মূল্য তালিকা থেকেও ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে বেগুন বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে, রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার বেগুনের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে নরসিংদীর বেগুন চাষিরা। আর বিভিন্ন সূত্র ও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুসারে জানা গেছে, নরসিংদীতে বর্তমানে ২/৩ টাকা কেজি দরে পাইকারি বেগুন বিক্রি হচ্ছে। যা মুন্সীগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে।
উচ্চমূল্যে বেগুন বিক্রির কারণ জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জ বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আলম বলেন, আমরা নিজেরা সরাসরি বেগুন বা অন্যান্য সবজি কিনে আনি না। মুন্সীগঞ্জ বাজারে সবজি পৌঁছানোর আগেই তা কয়েক হাত বদল হয়। এছাড়া পরিবহন খরচ তো আছেই। আমরা খুচরা বিক্রেতারা কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে কিনে থাকি। দোকান ভাড়া, মালের ঘাটতি সবকিছু মিলিয়ে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়।
স্থানীয় ক্রেতা মো. আবুল কালাম জানান, মুন্সীগঞ্জ বাজারে অন্যান্য বাজার থেকে সবসময়ই সবজির দাম বেশি থাকে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি চাষ হলেও স্থানীয় বাজারগুলোতে সবজির দাম অনেক বেশি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেখুন- মুন্সীগঞ্জে আলু উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। তারপরও আলু বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাজার থেকে অত্যন্ত চওড়া দামে কিনতে হয়। এ নিয়ে নিম্নআয়ের মানুষদের বিপাকে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, খবরের কাগজে দেখলাম নরসিংদীতে বেগুন বেশি উৎপাদন হওয়ায় সেখানকার বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি বেগুন ২ টাকা থেকে ৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সাড়ে চার ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে মুন্সীগঞ্জে সেই বেগুন হয়ে যাচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা।
মুন্সীগঞ্জ জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা শুধু বাজার মূল্য সংগ্রহ করি। বাজার মনিটরিং করি না। তাই বেশি দরে সবজি বিক্রি হলে আমাদের কিছু করার নেই।
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম দেওয়ান জানান, জেলায় বেগুনের বাৎসরিক চাহিদা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
তবে স্থানীয় কৃষকরা রবি মৌসুমে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) বেগুন চাষ করে। শীত ছাড়াও গরমে এই অঞ্চলে বেগুন আবাদ করে স্থানীয় কৃষকরা। তাই এখনও অনেক জমিতে বেগুন রয়েছে। যা উত্তোলনের প্রক্রিয়ায়। চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জে মোট ১৯৫ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়। তবে এর লক্ষ্যমাত্রা এখনও নিরুপণ করা হয়নি। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বেগুনও ঢাকাসহ বাইরের জেলাগুলোতে রফতানি হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম শওকত আলম মজুমদার জানান, উচ্চমূল্যে বেগুন বিক্রির ব্যাপারে দ্রুত বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভবতোষ চৌধুরী নুপুর/এএম/এমএস