বিড়ম্বনার আরেক নাম রেলযাত্রা

রিপন দে
রিপন দে রিপন দে মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১০:৪১ এএম, ৩১ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়া সেকশনে বার বার যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিচ্ছে আন্তঃনগর রেলগুলোতে। এতে আতঙ্কিত হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রশ্ন উঠেছে এই সেকশনে চলাচলকারী রেলের মান নিয়ে। রেলের এসব দুর্ঘটনা, যাত্রীসেবার মান, যাত্রীদের ভোগান্তি ও বিভিন্ন সংকট নিয়ে পাঁচ পর্বের প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি। আজ থাকছে তার পঞ্চম ও শেষ পর্ব

বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের কথা চিন্তা করে ১৯৮৭ সালে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। কিন্তু রেলযাত্রার এতদিন পরও বাড়েনি সেবার মান। পথে পথে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।

সচরাচর রেলভ্রমণ অনেকটা আরামদায়ক হওয়ায় অনেকে মধ্যবয়সেও আফসোস করে বলেন 'জীবনে একবার ট্রেনে উঠলাম না'। কিন্তু বর্তমানে রেলের যে অবস্থা তাতে কেউ সখের বশে রেলে উঠবে বলে মনে হয় না। রেল যাতায়াত ব্যবস্থায় ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। সময়মতো টিকিট না পাওয়া আবার কখনো কখনো টিকিট পেলেও সিট না পাওয়া, দুর্গন্ধযুক্ত টয়লেট, লক্কড় ঝক্কড় রেল, ঘনঘন দুর্ঘটনা ও হিজরাসহ ভাসমান ভিখারিদের অত্যাচার মানুষের ট্রেনের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।

এখনও যারা ট্রেনে যাতায়াত করেন তাদের সিংহভাগ সড়ক পথে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে ওঠেন। সম্প্রতি আবার যুক্ত হয়েছে মালামাল চুরি। অনেক ব্যবসায়ী তাদের মালামাল চুরি হওয়ার ঘটনায় মালামাল নিয়ে রেলে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। তার উপর আরো বিরক্তির কারণ হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা, দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো, একহাত সিট পেতে টিকিট চেকারদের পকেটে অতিরিক্ত টাকা দেয়া ইত্যাদি।

যথাসময়ে টিকিট না পেয়ে অনেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে কালোবাজারিদের থেকে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ টিকিট না পেয়ে টিকিট চেকারকে ম্যানেজ করলেও কমলাপুরসহ বিভিন্ন স্টেশনে পুলিশের হাতে হেনস্তা হচ্ছেন। আর এসবই হচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ আর সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে।

Moulovbazar-Train

গত ১ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের শমশেরনগরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন কয়েক কার্টুন স্কুলব্যাগ ও অন্যান্য স্টেশনারি সামগ্রী নিয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বুক করেছিলেন। শরীফ সু স্টোরের মালিক শরীফ বাশার তার দোকানের জন্য ৫ কার্টুন জুতা সুরমা মেলে পরিবহনের জন্য নরসিংদি রেলওয়ে স্টেশনে বুক করেছিলেন। বুকিংকৃত এসব কার্টুনভর্তি মালামাল পরিবহন করা হয়। কিন্তু পর দিন সকালে ট্রেনটি শমশেরনগর স্টেশনে আসার পর লাগেজ ভ্যান থেকে জুতা ভর্তি ২ কার্টুন ও স্কুল ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী ভর্তি একটি কার্টুন পাওয়া যায়নি। গায়েব হওয়া এসব মালামালের মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা বলে জানা যায়।

শমশেরনগর বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর মালিক (বাবুল) ট্রেন থেকে দুই ব্যবসায়ীর মালামাল চুরি সম্পর্কে বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা দিতে না পারলে ব্যবসায়ীরা ট্রেনে মালামাল বুকিং করবেন না।

দিনের পর দিন ট্রেন যাত্রায় চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে আছেন চট্টগ্রাম-সিলেট ও সিলেট-ঢাকা রুটের ট্রেন যাত্রীরা। এসব কারণে সিলেট-ঢাকা রুট ছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেটের ট্রেন যাত্রার মাধ্যম আন্তঃনগর রেলগুলোর সেবার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

এসব বিষয়ে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি দাস বলেন, আমরা প্রতিদিন ৩-৪ জনকে বিভিন্ন অভিযোগে আটক করছি। কিন্তু তারা ২/৩ দিনের মাথায় আবার জামিনে বেরিয়ে আসে। কারণ সবাই মুখে অভিযোগ দিলেও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয় না। ফলে মামলার ভিত্তি শক্ত হয়না। সাধারণ মানুষের সহযোগিতা না পেলে এদেরকে শাস্তি দেয়া সম্ভব না।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।