৩ দিন মৃত মায়ের আঙুল চুষে বেঁচে থাকা শিশুটি চাচির দায়িত্বে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৪১ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তিনদিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষে বেঁচে থাকা দেড় বছরের শিশু নাহিদকে লালন-পালনের জন্য তার চাচি মাহিনুরের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আব্দুল মালেকের উপস্থিতিতে শিশুটিকে চাচির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত সোমবার শিশু সন্তান নাহিদের সামনে গৃহবধূ রিমা আক্তারকে (২২) নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় তার স্বামী আলামিন। বুধবার সন্ধ্যায় শিশুর কান্না ও লাশের দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা ঘরের তালা ভেঙে রিমার মরদেহ দেখতে পান। পরে লাশের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি তিনদিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষে আশ্চর্যজনকভাবে বেঁচে যায়।

এদিকে এ ঘটনায় খবর পেয়েও নিহত রিমার পরিবারের কেউ না আসায় মামলা হয়নি। তবে পরিবারের কেউ মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও পরিবারের লোকজন না আসায় রিমার মরদেহ দাফনের জন্য ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেকের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মরদেহটি স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন আব্দুল মালেক।

শিশুটির চাচি মাহিনুর জানান, তিনি স্থানীয় আজাদ নিট কম্পোজিট সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। সব কিছু ম্যানেজ করে নাহিদকে লালন-পালন করতে তার কষ্ট হবে না। তার নিজেরও এক সন্তান আছে। তাকে যেভাবে দেখেন নাহিদকে সেই ভাবেই দেখবেন। তাকে কোনো কষ্ট পেতে দেবেন না।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী বাবুর (মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন) সঙ্গে দেবর আলামিনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কারণ আলামিন নিজেইে পুলিশ দিয়ে বাবুকে ধরিয়ে দিয়েছে। যার কারণে আলামিনের ঘরে কখনো উঁকিও দেননি। আলামিন কখন তার বউ মেরেছে তাও দেখেননি।

মাহিনুর বলেন, রিমার লাশ যখন থানায় আনা হয় তখন পুলিশ নাহিদের সঙ্গে আমাকেও নিয়ে যায়। নাহিদ রাতে থেকে খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার শরীর অনেক দুর্বল। সে পাতলা পায়খানায় ভুগছে। গত রাত থেকে তাকে দুধ, খাবার স্যালাইনসহ পাতলা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।

ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অটল দাস জানান, নিহত রিমা আক্তারের পরিবারের লোকদের সঙ্গে যোগযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহতের খালুর সঙ্গে ফোনে কথা হলেও মামলা করতে অনাগ্রহ দেখানোয় এখনও মামলা দায়ের হয়নি।

তিনি আরও বলেন, রিমাকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতসহ জখম রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকারী আলামিনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজালাল জানান, হত্যার শিকার রিমা আক্তারের বাড়ি পাবনা জেলাতে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অনেকবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অনেকবার তাদের অনুরোধ করা হলেও পরিবারের কেউ লাশ গ্রহণ করতে রাজি হয়নি। তাদের এ নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। নিহতের পরিবারের কেউ মামলা করতে রাজি না হলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে বলে তিনি জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকার আছির আলী সরদারের ছেলে আলামিন গত আড়াই বছর আগে গার্মেন্টকর্মী রিমা আক্তারকে প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানে শিশুটির বয়স দেড় বছর। আলামিন গার্মেন্টকর্মী হলেও এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত।

আলামিন ঠিকমতো কাজে না গিয়ে মাদক ব্যবসা করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। কিছু বললে স্ত্রী রিমাকে আলামিন মারধর করতো। আলামিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েও পারেননি স্ত্রী। সোমবার রাতের কোনো এক সময় আলামিন তার দেড় বছরের শিশুর সামনে স্ত্রী রিমাকে ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে শিশুকে রিমার লাশের পাশে রেখেই ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।

শাহাদাত হোসেন/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।