টাঙ্গাইল কারাগারে চালু হলো স্বজন, বাড়িতে কথা বলবেন বন্দিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ২৮ মার্চ ২০১৮

টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দিদের মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য ‘স্বজন’ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বুধবার দুপুরে টাঙ্গাইল কারাগারে তিনি এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই দিন চারজন বন্দী তাদের স্বজনদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সব কারাবন্দি কারাগারে বসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। এ জন্য দেশের সব কারাগারে বুথ স্থাপন করা হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ দেশের কারাগারকে বন্দিশালা নয়, সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজেই এ কাজে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জেলখানাকে কারাগার বলতে চাই না, কারাগার হবে ‘সংশোধনাগার’। বর্তমানে দেশের সংশোধনাগারে যিনি যে কাজ পারেন তাই করছেন এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০% তিনি সাজা শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে পারছেন। বন্দিদের জন্য আমরা সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্বের বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করে আমরা বন্দিদের সার্বিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলার আসামি নয় সেইসঙ্গে সব মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশ বাধা দেয় না। বিএনপি বা অন্য যে কোনো দল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে পালন করছে। শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতান্ত্রিক চর্চায় পুলিশের বাধা দেয়ার সুযোগ নেই।

Tangail-Home-minister-(2)

সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বজনের সঙ্গে সংশোধনের পথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল কারাগারে প্রথমবারের মতো বন্দিদের পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকতে চালু করা হলো মোবাইলফোন সেবা ‘স্বজন’। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রিজন লিঙ্ক- স্মার্ট কমিউনিকেশন সিস্টেম ফর ইনমেটস অ্যান্ড রিলেটিভস’। তবে প্রকল্পটি ‘স্বজন’ নামেই পরিচিত।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে মোবাইল ফোন সেবা ‘স্বজন’ উদ্বোধন করে কারাগার চত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বজনরা কারাবন্দিদের সঙ্গে দেখা ও কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন কথা না হলে কয়েদিদের মনে একাকিত্ব ভর করে, তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে ‘স্বজন’ চালু করা হলো। কয়েদিরা এই দিনের অপেক্ষায় ছিল।

টাঙ্গাইল কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ কয়েদি-হাজতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম প্রথম শুরু করা হলো।

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ ফজলুর রহমান খান ফারুক, টাঙ্গাইল সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার জহিরুল হক প্রমুখ।

টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে এই সেবার জন্য অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি।

প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দুইবার করে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলা যাবে। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে সংশ্লিষ্ট কারাবন্দিকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। মহিলা, বৃদ্ধ, শিশু ও অল্প বয়স্ক কিশোর বন্দিরা কথা বলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। নির্ধারিত সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার ৩ মিনিট পূর্বে সতর্কসূচক ‘বিপ’ শব্দ হবে। তবে বন্দিরা আপাতত কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বলার সময়।

এই বুথের ফোন থেকে বন্দিরা চাইলেই যে কোনো নম্বরে ডায়াল করতে পারবেন না। একইভাবে কোনো ফোন কলও আসবে না। এর কারণ, মোবাইল সেবাটির জন্য বানানো সফটওয়্যারে আগে থেকে নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া থাকবে। এ জন্য সেগুলো ছাড়া অন্য নম্বরে ফোন কল ডায়াল করা যাবে না।

আরিফ উর রহমান টগর/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।