আষাঢ়েও ফাটছে আমন ক্ষেত


প্রকাশিত: ০৮:৫৯ এএম, ২৬ জুলাই ২০১৫

দেশের অনেক অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ঠিক ওই সময়ে উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নীলফামারীসহ পাশ্ববর্তী জেলাসমূহে। শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় আমন চাষের মুখ্যম মৌসুম হলেও পানির অভাবে চারা নষ্ট হচ্ছে। পাট পঁচাতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষককে। বোরবার দুপুরে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

নীলফামারীর জেলার তিন ভাগের একভাগ জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারেনি কৃষক। আবার যেসব জমিতে চারা রোপণ করা হয়েছে তাপদাহের কারণে তাও আবার পুড়ে যাচ্ছে।

জেলার ডিমলায় তিন ভাগের দুই ভাগ জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারলেও বৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে আমন ক্ষেত পুড়ে যাচ্ছে। এমনকি দুর্ভোগে যখন নিজের রোপণকৃত আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে তখন ফসল বাঁচাতে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা করছেন ভুক্তভোগীরা। কৃষকদের অভিযোগ আমনের ভরা মৌসুমের বৃষ্টি পানি না হওয়ায় ক্ষেত পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে কৃষক ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপের দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে কৃষকের খরচের পাশাপাশি আমনের ফলন ব্যহত হতে পারে। গত ৩ মাসে ডিমলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৫৩১ মিলিলিটার।

সরেজমিনে ডিমলায় বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, কৃষকদের রোপিত আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়েছে। উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাতনাই, ঠাকুরগঞ্জ, মধ্যছাতনাই, বালাপাড়া ইউনিয়নের ছাতনাই বালাপাড়া, সুন্দরখাতা, ডিমলা সদর ইউনিয়নের উত্তর তিপাড়া, পচারহাট, কুটিরডাঙ্গা, খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের বন্দর খড়িবাড়ী, দোহলপাড়ার উচু জমির এখনও কৃষকরা আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারেনি। আবার যেসকল জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে তাও আবার পুড়ে যাচ্ছে। বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দরখাতা গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম জানান, গত ১০ দিন থেকে বৃষ্টির পানি না হওয়ায় আমন ক্ষেত ফেটে চৌচির ও তাপদাহের কারণে ক্ষেত মরে যাচ্ছে।

একই গ্রামে গোলাম মোস্তফা জানান, শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও আমন ক্ষেত রক্ষা করা যাচ্ছে না। উত্তর তিতপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম জানান, প্রতিদিন শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়েও আমন ধান রক্ষা করতে পারছি না।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৯ হাজার ২৭৩ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের টার্গেট করা হলেও ২৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর আমন ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। কৃষি অফিস জানায় গত মে মাসে ১৬৪ মিলিলিটার, জুন মাসে ২৫২ মিলিলিটার ও জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১১৫ মিলিলিটার। ভরা মৌসুমে আশানারূপ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রোপিত আমন ক্ষেত পুড়ে যাচ্ছে। ডিমলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানায়, বোরবার দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেন্ডিগ্রেট।

ডিমলায় ডিজেল চালিত অগভীর নলকুপ ৫ হাজার ৯৮০টি, বিদ্যুত চালিত গভীর নলকুপ ১৫টি ও অগভীর নলকুপ ২ হাজার ৯১০টি, পা-চালিত সেচ যন্ত্র ৮৯০টির মাধ্যমে আমন ধানের আবাদ করা হচ্ছে। এদিকে নিয়মিত বিদ্যুত না থাকা ও ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুত চালিত সেচ পাম্পের সাহায্যে সেচ প্রদান করতে পারছে না কৃষক। বাধ্য হয়ে ডিজেল চালিত সেচ পাম্প দিতে আমন ধান রোপণ করছে।

ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমন ক্ষেত পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে বৃষ্টি হচ্ছে না অপরদিকে প্রচণ্ড তাপদাহে কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে।

জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।