নবজাতককে দুই খণ্ড, গঠন হচ্ছে তদন্ত কমিটি
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন ও জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন ও অপারেশনে অংশ নেয়া চিকিৎসকসহ সাতজনকে হাইকোর্টে তলব করে রুল জারির পর নড়েচড়ে বসেছে কুমেক ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
এরই মধ্যে কুমেক কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। জাগো নিউজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে তোলপাড় চলছে। জানা যায়, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন রোববার আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান, ব্যারিস্টার ফারহানা ইসলাম খান, আনিসুল হাসান ও সেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ।
এতে আদালত ৫ ডাক্তারসহ সাতজনকে তলব করেছেন। একইসঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
এই ঘটনায় আগামী ৪ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, কুমিল্লার সিভিল সার্জন, গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার, ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে কুমেকের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকার ফোনে জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রোগীর জীবন রক্ষায় তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে আমরা জরায়ু কেটে ফেলি, এতে ডাক্তারদের অবহেলা ছিল না বলে তারা দাবি করেন।
রোববার বিকেলে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান জানান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিষয়টি একান্তই ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অধীন। যেহেতু এ ঘটনায় আমাকেসহ ৭ জনকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য মহামান্য হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছে, তাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে আগামী ৪ এপ্রিল এ ব্যাপারে আদালতে ব্যাখ্যা প্রদান করা হবে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের কোনো অদক্ষতা প্রমাণিত হলে মহামান্য হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দেবেন সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কুমেকের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী জানান, এ বিষয়টি তদন্ত করতে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এ বিষয়ে তদন্তের পর দায়িত্বে কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগম (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে ১৭ মার্চ রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরদিন দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন। এ সময় জুলেখার অপারেশন করে তার নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং জরায়ু কেটে ফেলার সংবাদ জাগো নিউজসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
কামাল উদ্দিন/এমএএস/জেআইএম