সিজারের সময় নবজাতককে দুই খণ্ড করলেন ডাক্তার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ২৪ মার্চ ২০১৮

আবারও কুমিল্লায় প্রসূতির পেটে নবজাতকের মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওই প্রসূতির জরায়ু কেটে অপারেশন করা হয়েছে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জুলেখা বেগম নামের ওই প্রসূতি গত এক সপ্তাহ ধরে সন্তান ও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন।

শনিবার সকালে এ খবর জানাজানি হলে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ভিড় জমান। এ ঘটনায় হাসপাতালসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ওই প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

পরদির রোববার দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন।

এ সময় ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজসহ অন্যরা অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।

প্রসূতির স্বামী সফিক কাজী বলেন, প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে সিজারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। এ সময় নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং আমার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

তিনি আরও জানান, ওদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটিচাপা দেয়ার জন্য ৫০০ টাকা চান। পরে তিনি ৩০০ টাকা দেন। ওই দারোয়ান নবজাতকের মরদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এ সময় তিনি মোবাইলে নবজাতকের ছবি তুলে রাখেন। এরপর দারোয়ান হাসপাতালের অদূরে নিয়ে নবজাতককে মাটিচাপা দেন।

জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওই প্রসূতি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার সন্তানকে কেটে ফেলেছে। সেইসঙ্গে আমার জরায়ু কেটে অপারেশন করে দিয়েছে।

অপারেশনে অংশ নেয়া হাসপাতালের ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. আয়েশা আফরোজ, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক পজিশনে ছিল। কিন্তু শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে।

এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা জরায়ু কেটে ফেলি। অপারেশনের আগে এসব বিষয়ে প্রসূতির স্বামীর অনুমতি নেয়া হয়েছে এবং এতে ডাক্তারদের অবহেলা ছিল না বলে তারা দাবি করেন।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মতিউর রহমান সংশ্লিষ্ট চারজন ডাক্তারকে তার কার্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খণ্ড করে বের করে আনেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সঠিক কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ২৫ অক্টোবর জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরিপুরের লাইফ হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক প্রসূতির অপারেশনে একটি বাচ্চা বের করে আনার পর অপর একটি বাচ্চা টিউমার ভেবে সেলাই করে দেয়া হয়। পরে ঢামেকে নিয়ে অপারেশন করে অপর মৃত বাচ্চা বের করার ঘটনা ঘটে।

মো. কামাল উদ্দিন/এএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।