হলি আর্টিসান হামলার অনেক আগেই বাড়ি ছেড়েছিল জঙ্গি সাগর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৯:১৮ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৮

গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার অনেক আগেই বাড়ি ছেড়েছিল জেএমবি সদস্য হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে আবু ওয়াক্কাস। গ্রামের মানুষের কাছে একজন ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল সাগর। যদিও গ্রামে সাগর নামে তাকে কেউই চেনে না।

দীর্ঘদিন থেকে পলাতক হাদিসুর রহমান সাগর হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার সমন্বয়ক এবং অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে স্বীকৃত। ২১ মার্চ বুধবার রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে কখনো পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়নি সে।

পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩/১৪ সালে জেএবি নেতা তামিমের হাত ধরে জেএমবিতে নাম লেখায় সাগর। বিভিন্ন সময় নাম পরিবর্তন করায় তাকে কেউ চিনতে পারেনি। সম্প্রতি দক্ষিণ-পশ্চিমের একটি জেলা থেকে তার স্ত্রীকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য মতে সাগরকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার পলিকাদোয়া কয়রাপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক হারুনুর রশিদ ও আছিয়া খাতুন দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সাগর দ্বিতীয়। গ্রামের মাদরাসা থেকে দাখিল পাস করে আলিম ফেল করে সে। অভাবের সংসারে টানা পোড়েন লেগেই থাকত। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সে বাড়িতে আর ফিরবে না বলেও জানায়। পরবর্তীতে ঢাকায় একটা কোম্পানিতে চাকরি করে বলে পরিবারকে জানায় সে। মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসত কিন্তু বাবা-মাকে কোনো টাকা-পয়সা দিত না সে। এক পর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সাগর।

গ্রামেই একটা ছোট মুদির দোকান চালান সাগরের মা আছিয়া খাতুন। হারুনুর রশিদ একটা ছোট ওষুধের দোকান চালালেও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন চলাফেরা করতে পারেন না।

সাগরের মা আছিয়া খাতুন জানান, তার দুই ছেলের কেউই তাদের দেখাশুনা করে না। তারপরও সাগরকে অনেক খুঁজেছেন তারা। ২০১৬ সালে পুলিশ সাগরের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে এবং বেশকিছু তথ্য নেয়। ছেলের নিখোঁজে থানায় জিডিও করেন তারা। কিন্তু পুলিশ কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। তবে মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা পুলিশ তাদের বাড়িতে আসত এবং বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা বলত। কেউ কেউ টাকা পয়সাও দাবি করত বলে জানান সাগরের মা।

সাগরের চাচি কবিতা খাতুন জানান, সাগর সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকত। তার ব্যবহার খুব ভালো ছিল।

প্রতিবেশি ইসতামুল, আবদুস সবুরসহ কয়েকজন জানান, হাদিসুর খুব শান্ত ছেলে। নিয়মিত নামাজ পড়ত এবং সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করত। সে জঙ্গি দলের সদস্য এমন কোনো কাজ বা আচরণ কারো সঙ্গে করেনি। সংবাদ মাধ্যমে তারা জানতে পারেন হাদিসুর জেএমবি সদস্য এবং পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হাদিসুর ওরফে সাগর বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর কুষ্টিয়া এলাকায় বসবাস করতো। পরে সে পাবনায় বিয়ে করে।

সাগরের মা জানান, একবার বউকে নিয়ে এসেছিল সাগর। তাও অনেক আগে। সে কোথায় থাকত, কী করত কিছুই জানায়নি।

বেশ কয়েক বছর ধরেই পুলিশ এলাকা থেকে নিখোঁজ তরুণদের একটা তালিকা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে। কিন্তু কারো কোনো খবরই বের করতে পারেনি তারা। হাদিসুর ধরা পড়ার আগে তার সম্পর্কে কোনো তথ্যই ছিল না পুলিশের কাছে। তবে সে যে জঙ্গি দলের সদস্য সেটা অনেক আগেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন জানান, হাদিসুরের সম্পর্কে তারা অনেক আগেই অনুমান করেছিলেন সে জঙ্গি দলে আছে। তবে খুঁজে বের করতে পারেননি তারা। পুলিশ হাদিসুরের বাবা হারুনকে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে হাদিসুর জেএমবি দলে যোগ দিতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছিল না।

রাশেদুজ্জামান/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।