জমির মালিকানা ও উন্নয়ন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিটমহলের মানুষ


প্রকাশিত: ১০:০০ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরে ১৬২ ছিটমহলের অধিবাসীরা এখন অস্থির সময় পার করছেন। অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে তাদের ভবিষ্যৎ। কোন দেশে গেলে বেশি লাভ এ হিসেব-নিকেশ করে আনন্দ ও হতাশা কাজ করছে অনেকের মাঝে। `শেষ ভালো যার সব ভাল তার` কিংবা `আল্লাহ যা করেন তা মঙ্গলের জন্যই করেন` এসব যুক্তি দিয়ে মনকে শান্ত করছেন অনেকে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ভারতের ছিটমহলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহল ফুলবাড়ির দাসিয়ারছড়া। এছাড়াও জেলায় আরো এগারটি ছিটমহল রয়েছে। এ বারটি ছিটমহলের প্রায় আট হাজার মানুষ এখন চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জমি নিয়ে। জমির মালিকানার উপর নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যৎ। রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় দলিলপত্র না থাকায় তাদের এ দুশ্চিন্তার মূল কারণ। ভূমির মালিকানা কিভাবে নির্ধারণ করা হবে সরকারিভাবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটবে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৬২টি ছিটমহল চূড়ান্ত  বিনিময় হওয়ার খবরে আনন্দ থাকলেও জমি ও উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে আবেগ ও দুশ্চিন্তার দোলাচল লোকজনদের চোখে মুখে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছিটমহল বিনিময়ের পর পরই সার্ভে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছিটমহলবাসীদের দখলে থাকা জমির মালিকানা কিভাবে নির্ধারণ হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। ছিটমহলের উন্নয়নমূলক কাজের রোডম্যাপ কী তাও কারো জানা নেই। ফলে দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, ছিটমহলবাসীর মূল সম্পদ জমি। এই জমির মালিকানা নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে সবার। তাদের জমির মালিকানার মূল হচ্ছে দখল ও সাদা কাগজে বিশেষভাবে তৈরি স্ট্যাম্পে লেখা দলিল। ছিটমহল বিনিময়ের পর প্রশাসন এ দলিলের বৈধতা দেবে কিনা এবং কিভাবে জমির মালিকানা নির্ধারণ করবে এমন প্রশ্ন তাদের মনে উঁকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

ছিটমহল বিনিময়ের পরই সর্বপ্রথম কুড়িগ্রাম জেলার বারটিসহ চার জেলায় ১১১টি ছিটমহলে শুরু হবে জমির সার্ভের কাজ। তবে সার্ভের কাজটি কিভাবে করা হবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কোনো দিক নির্দেশনা নেই।

কুড়িগ্রামে ছিটমহল তথ্য সমন্বয় কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল মারুফ জাগো নিউজকে জানান, কুড়িগ্রামসহ চার জেলায় একসঙ্গে জমির সার্ভের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি শুরু হবে উন্নয়নমূলক কাজ। নতুন এসব নাগরিকদের দ্রুত কিভাবে নাগরিক সেবা প্রদান করা যায় তার একটি ফিরিস্তি তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। সরকারি সকল সেবাদানকারী অফিসগুলোর সমন্বয়ে জেলা প্রশাসনের সভা হয়েছে একাধিকবার। কোন বিভাগ কী সেবা দেবে তা ঠিক করে রাখা হয়েছে। নাগরিক সেবার মধ্যে সবচেয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য সেবা বিষয়কে।

এরপরই রয়েছে রাস্তাঘাট নির্মাণ ও মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, দরিদ্র ছিটমহলবাসীদের জন্য সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন ভিজিএফ ও ভিজিডি সুবিধা, বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার জন্য জরুরি ভিত্তিতে তালিকা প্রণয়নের কাজ। দেয়া হবে জরুরি খাদ্য সহায়তা।  

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে ছিটমহলের জমি সার্ভে করার সিদ্ধান্ত আমাদের রয়েছে। তারপরও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের উপর আমরা নির্ভর করছি। ছিটমহলের নতুন নাগরিকদের সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। দেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহলের উন্নয়নের জন্য সরকারের ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি সেবা  দ্রুততার সঙ্গে যেন দেয়া যায় সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বড় ছিটমহলগুলোতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক জাগো নিউজকে জানান, বাংলাদেশের ভারতীয় ছিটমহল থেকে ৯৭৯ জন ভারতীয় ভারতে ফিরে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের কেউ বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেনি। গত ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত দুই দেশের যুগ্ম পর্যবেক্ষক দল ৭৫টি দলে বিভক্ত হয়ে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

তিনি আরো জানান, ভারত পুনর্বাসনের জন্য কোচবিহারে আন্তর্জাতিক মানের আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাকাপাকি  পুনর্বাসনের জন্য মেখলিগঞ্জ, দিনহাটা ও হলদিবাড়িতে চারতলা আবাসন গড়বে। প্রতিটি পরিবার ৮শ থেকে ৯শ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট পাবেন বলে জানা গেছে। সার্বিক উন্নয়নে ভারতের বাজেট বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি রুপি। এ কারণে অনেকের আফসোস রয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের ১১১টি ছিটমহলের উন্নয়নে বরাদ্দ রেখেছে মাত্র ২শ কোটি টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

নাজমুল হোসেন/এমজেড/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।