মাকে আর টাকা পাঠাবে না রিমন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৮

মাস শেষে মাকে আর টাকা পাঠাবেন না মাহমুদুর রহমান রিমন। কোম্পানির অফিসের কাজে নেপাল যাচ্ছিলেন ফরিদপুরের ছেলে রিমন।

সোমবার নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা বিমানের যাত্রী ছিলেন তিনি। বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রকাশিত নিহতদের তালিকায় মাহমুদুর রহমান রিমনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের ঝপরকান্দা গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে। তার ডাক নাম রিমন। নিহত রিমন রানার অটো মোবাইলস কোম্পানিতে হেড অব সার্ভিস পদে চাকরি করতেন। স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর নিকুঞ্জতে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।

রিমনের মৃত্যুর খবর পরিবারের অন্যরা জানলেও বাবা মশিউর রহমান জানেন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বিমান দুর্ঘটনায় রিমন আহত হয়েছেন এমনটি বৃদ্ধ বাবা মশিউরকে জানানো হয়। কিন্তু রিমনের স্ত্রী ঝর্ণা মাহমুদের মাধ্যমে পরিবারের অন্য সদস্যরা রিমনের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। এরপর থেকে রিমনের মা লিলি বেগম সন্তান হারানোর আর্তনাদে মুর্ছা যাচ্ছেন।

প্রিয় সন্তান হারা মায়ের আর্তনাদে ওই এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন রিমনের ছোট ভাই মোখলেছুর রহমান রুপম। মৃত্যুর খবরে শুনে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বাড়িতে ভিড় করেছেন প্রতিবেশীরা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রিমনের মা বলেন, অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়েছি ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বাঁচবো বলে। সেই আশা পূরণে রিমন চাকরিও নেয়। ওর পাঠানো টাকা দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। আমাদের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বন ছিল রিমন। মাস শেষে আর আমার জন্য টাকা পাঠাবে না রিমন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত রিমন স্থানীয় আতিকুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ফরিদপুর পলিটেকনিক্যাল কলেজ থেকে পাওয়ার বিভাগে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন। তিনি ২০১১ সালে রানার অটো মোবাইলস কোম্পানিতে চাকরি নেন। বর্তমানে হেড অব সার্ভিস পদে কর্মরত ছিলেন।

রানার অটো মোবাইল কোম্পানির ফরিদপুর এরিয়া ইনচার্জ আব্দুল মাজেদ জানান, কোম্পানির কাজে রিমনসহ আরও দুই সহকর্মী মতিউর রহমান পলাশ ও নুরুজ্জামান নেপালে যাচ্ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনায় আমাদের কোম্পানির ওই তিনজন মারা গেছেন।

রিমনের চাচা মো. আফতার উদ্দিন বলেন, বৃদ্ধ ও অসুস্থ হওয়ায় বর্তমানে রিমনের বাবা কিছু করতে পারছেন না। রিমনের ছোট ভাই রুপম এইচএসসি পাস করে বর্তমানে বেকার। প্রতিমাসেই সংসার খরচের টাকা পাঠাতো রিমন। ওই টাকা দিয়েই তাদের সংসার চলতো। মা-বাবাকে খুবই যত্ন করতো রিমন। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়লো।

এস.এম. তরুন/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।