মাঠ থেকে শিল্পের দুয়ারে নারীদের জয়যাত্রা সবখানে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০২:০৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৮

বেগম রোকেয়া। না পায়রাবন্দের রোকেয়া নয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহের রোকেয়া, সবার পরিচিত মাস্তুরা আপা। মাত্র সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অবস্থায় তার বিয়ে হয়। এরপর সংসার জীবন ছিল মাত্র সাত বছরের। দুই কন্যার মা বেগম রোকেয়া মানবাধিকার কর্মী ও সমাজ সংগঠক, নেত্রকোনার স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক, জাহানারা স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নেত্রকোনা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি।

বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর এই পরিবারটি খুব কষ্টের মধ্যে পড়ে। অভাব অনটনের মধ্যে নিজেকে টেনে বের করেছেন মুক্তো আলোয়। জীবনে পদে পদে লড়াই করে এগিয়ে চলেছেন আগামীর পথে। কাজ করছেন নারীর অধিকার নিয়ে। নিজের অসহায়ত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছেন সমাজ সংসারকে। শুধু তাই নয়, তার প্রতিষ্ঠি স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতিতে কাজ করছেন সহস্রাধিক নারী পুরুষ।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত নেত্রকোনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন তিনি। চাকরি থেকে অগ্রিম অবসর নিয়ে তিনি নেত্রকোনার স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০১০ সালে আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়ার নাইরুবিতে বিশ্ব মাইক্রো ক্রেডিট সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন। বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের নারীদের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তিনি।

নেত্রকোনা সদর উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আরেক সফল নারী কামরুন্নাহার লিপি। সংসারের টানাপোড়েনে মাত্র এক যুগ আগে আটশ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন সেলাইয়ের কাজ। এরপর থেকে আর থেমে থাকেননি লিপি। বর্তমানে নিজ বাড়িতেই তিনি গড়ে তুলেছেন মিনি গার্মেন্টস। এখন তার গার্মেন্টসে কাজ করছেন ১০২ জন মানুষ। যার নব্বই ভাগই নারী কর্মী।

কামরুন্নাহার লিপি জানান, যেকোনো মানুষের যদি ইচ্ছা শক্তি থাকে তবে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। কত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সামনে এগুতে হয়। জীবন চলার পথে বাধা থাকবেই, এসব অতিক্রম করেই মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে হয়।

Picture-Netrokona-(2)

অপরদিকে গ্রাম থেকে উঠে আসার কথা অকপটে স্বীকার করলেন নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক সাদিয়া আক্তার। শুধু সাদিয়াই নন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকতা হয়ে নারীদের অগ্রযাত্রায় কাজ করছেন অনেক নারীই। পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিয়ে দেশকে আরো সামনের দিয়ে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় জানান তারাও।

নেত্রকোনার দশ উপজেলার মধ্যে আটপাড়া, বারহাট্টা, পূর্বধলা ও নেত্রকোনা সদরের উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।

বারহাট্টার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিন জাগো নিউজকে জানান, নারীরা কিন্তু এখন তৃণমূল পর্যায় থেকে আকাশ পথ পর্যন্ত সামলাচ্ছে। দেশের বড় বড় পদগুলোতে চ্যালেঞ্জিং কাজে ভালো করছে নারীরা। তাই সরকারের দেয়া সকল সুবিধাকে কাজে লাগালে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে।

জানাতে চাইলে নেত্রকোনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জাগো নিউজকে জানান, গত এক দশক আগেও নারী যে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক হতে পারবেন সেটা অনেকেই চিন্তা করতে পারেনি।

নেত্রকোনা সদর উপজেলা পরিষদ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তুহিন আক্তার জাগো নিউজকে জানান, রাজনীতি থেকে শুরু করে সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে চলেছে। দেশ মধ্যম আয়ের দেশ পরিণত হওয়ার পেছনে নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা পিছিয়ে আছে। তাদের জন্য আরো নানামুখি পদক্ষেপ নিতে হবে।

এদিকে বংশ পরম্পরায় গারো নারীদের নেতৃত্ব চলে আসায় মাঠে ঘাটে কাজ করছেন তারা। তবে এখন শিক্ষাক্ষেত্র ও চাকরিতে অগ্রাধিকারের দাবি তুলছেন তারা। নেত্রকোণায় ৬টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির প্রায় দেড় লক্ষাধিক লোকবাস করে। এর মধ্যে গারো লক্ষাধিক, হাজং প্রায় ১৫ হাজার, কোচ ১০ হাজারের মতো উপজাতি জেলার দুর্গাপুর ও কলমাকান্দায় বাস করে। জেলার গারো নারীরা সংসারের পাশাপাশি খেতে খামারেও কাজ করে সমানভাবে।

কামাল হোসাইন/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।