ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন চাঁদপুরের সন্তান

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে রয়েছেন চাঁদপুরের কচুয়ার কৃতি সন্তান বিপ্লব কুমার দেব। ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে তার নেতৃত্বে বিজেপি অভাবনীয় জয় পেয়েছে। তিনি রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দুই বছরের মধ্যেই দলটিকে ঐতিহাসিক বিজয় এনে দেন। তিনি নিজেও একটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। আগামী বুধবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে বিজেপি কেন্দ্রীয় কমিটি।

বিপ্লব কুমার দেব চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামের সন্তান। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা-মা ত্রিপুরা চলে যায়। এরপর সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান তারা। তবে তার আত্মীয়-স্বজন অনেকেই এখনও কচুয়ায় বসবাস করেন। তার চাচা প্রানধন দেব কচুয়া উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা রাজ্যের বিধান সভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে বিজেপি ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসন পায়। বিপ্লব কুমার দেব নিজেও একটি আসনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি।

বিপ্লব দেব ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে ৭ জানুয়ারি। বিপ্লব দেব আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিপ্লব দেব ১৫ বছর দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি ব্যায়ামাগারের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। এবার ত্রিপুরার বনমালিপুর আসন থেকে লড়েছেন বিপ্লব।

ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিপ্লব দেব ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা দলটির সবচেয়ে কম বয়সী রাজ্য সভাপতি। এই যুব নেতা মাত্র দুই বছরের মাথায় ২৫ বছরের বাম শাসনের পতন ঘটিয়ে লাল থেকে গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে দিলেন ত্রিপুরাকে। অন্য অনেকের নাম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলোচনা থাকলেও সবচেয়ে এগিয়ে আছেন বিপ্লব দেব। তার হাতেই ত্রিপুরার ভার সঁপে দেয়া হতে পারে।

বিপ্লব দেব সাংবাদিকদের বলেন, আমি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হতে প্রস্তুত আছি। তবে দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।

বিপ্লব আরএসএসে থাকায় কখনও অন্য কোনো দলের প্রতি আকৃষ্ট হননি। সেটা মাথায় রেখেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিপ্লবের ওপর আস্থা রাখেন। সেই আস্থার প্রতিদানে দলকে রাজ্যের ক্ষমতায় আনার পেছনে কাজ করেছেন তিনি। এর আগে বিপ্লব দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশের বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন।

বিপ্লবের আগে ত্রিপুরায় দলের নেতৃত্বে ছিলেন সুধীন্দ্র দাশগুপ্ত। অনেক বছর বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন তিনি। তবে বিপ্লবের সভাপতি হওয়ার পর বিজেপির বিজয়ের দিকে গেরুয়া দৌঁড় শুরু হয়। এবারের ভোটে ত্রিপুরার বনমালিপুর আসন থেকে লড়েছেন বিপ্লব। এ আসনটি ছিল কংগ্রেসের।

বিপ্লবের স্ত্রী নীতি দেব পাঞ্জাবের মেয়ে। দিল্লিতে দুজনের বিয়ে হয়। বিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি সব সময় বিপ্লবকে নির্বাচনে সাহায্য করেছি। ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ায় ত্রিপুরায় আসতে পারিনি। তবে দল জেতায় এবার পাকাপাকি ত্রিপুরায় এসে থাকতে চান বলে জানান নীতি।

শনিবার ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রতিক্রিয়ায় ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের যোগাযোগ ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা নিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন করা হবে। এ জয় বিজেপির জয় নয় রাজ্যবাসীর জয় বলে অভিহিত করেন তিনি। বামফ্রন্ট ত্রিপুরাবাসীর সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তার ফল হিসেবে রাজ্যের মানুষ জবাব দিয়েছেন।

বিপ্লব দেবের অভাবনীয় জয়ের খবর পেয়ে গতকাল শনিবার কচুয়ায় মিষ্টিমুখ করেছে তার আত্মীয়স্বজন ও অনুরাগীরা। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুর-১ কচুয়ার সাংসদ ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, আমার এলাকার সন্তান ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভায় জয়ী হওয়ায় আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।

চাচা প্রাণধন দেব জানান, বিপ্লব দেব তিন বোনের একমাত্র ভাই। তার বাবা স্বর্গীয় হিরুধন দেব। মায়ের নাম মিনা রানী দেব। তার বাবা-মা বাংলাদেশে থাকাকালে গর্ভধারণ করেছিলেন তা মা। তবে ত্রিপুরার মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লব দেব।

বিপ্লব দেব গত বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে বিজেপির প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে তিনি তখন তার গ্রামের বাড়ি কচুয়ায় হেলিকপ্টারযোগে আসেন। ওইদিন কচুয়া প্রেসক্লাব তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র অফিসার নীতি রানী দেব। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার প্রকৃত ভূমিতে এসে যে সম্মান পেয়েছি তা আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপরিচালনার ভূঁয়শী প্রশংসাও করেন তিনি।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।