এভাবেই চলে যেতে হলো সেই বাবলীকে?
‘বাবলী যখন পেটে তখনই বখতিয়ার বলেছিলেন তিনি মেয়ে সন্তান চান না। জন্মের পর তিন মাস বখদিতয়ার মেয়ের মুখও দেখেনি। বাবলীর ছয় মাস বয়সে বখতিয়ার আমাদের চট্টগ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। তখন টানা পাঁচদিন বাবলীকে ওর বাবা অ্যাসিড মেরেছে। কান ও পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় অ্যাসিড মারে সে। যেদিন মুখের ভেতর অ্যাসিড দেয় ওই দিন বাবলী বমি করে। তার শাড়ির যে জায়গায় বমি পড়ে ওইসব জায়গা পুড়ে যায়। হাসপাতালে ভর্তি পরই বাবলীর বাবা পালিয়ে যায়।’ কথাগুলো বলছিলেন এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী মেহিয়া আক্তার বাবলীর মা পারুল বেগম।
শুধু মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে এত নির্যাতন করেছিল জন্মদাতা বাবা। তারপরও হার মানেনি সে। অনেক সংগ্রাম করে বেঁচে যায়। বাবলী চেয়েছিল, পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বাবার মতো পুরুষদের দেখিয়ে দিতে যে, মেয়েরাও পারে। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। আর মাত্র দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল। কিন্তু বুধবার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় মিলল তার মরদেহ।
এমন আত্মবিশ্বাসী আর সংগ্রামী একটি মেয়ে কেন হঠাৎ করে জীবনের ওপর হতাশ হয়ে ‘আত্মহত্যা’ করল তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাবলীর মা পারুল বেগম জানান, মেহিয়া আক্তার বাবলী (১৭) টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ভারতেশ্বরী হোমসের ছাত্রী ছিল। কিছুদিন আগে তাকেসহ কয়েকজনকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই অপমান সইতে না পেরে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি তদন্তসাপেক্ষে এর বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
পারুল বেগম জানান, ভারতেশ্বরী হোমসের আবাসিক হলে রান্না নিয়ে তার মেয়ের সঙ্গে শিক্ষক ও রান্নাঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা কাটাকাটি হয়। এ বিষয়ে হোমস কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানালে তারা হোমসে এসে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চান। তিনিও ক্ষমা চেয়ে নেন যেন তার মেয়ে হোস্টেলে থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারে। কিন্তু হোমস কর্তৃপক্ষ ক্ষমা না করে আবাসিক হল থেকে বাবলীকে বের করে দেয়। পরে মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাইমহাটি গ্রামে এক বান্ধবী ও তার মায়ের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল বাবলী। বুধবার রাতে ওই বাসার একটি কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় বাবলীর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ প্রতিভা হালদার বলেন, মেহিয়া আক্তার বাবলীর বিরুদ্ধে হোমস হোস্টেলের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ থাকায় প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ রেখে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়। কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে এটা তার পরিবারের ব্যাপার হোমসের নয়।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ওসি একেএম মিজানুল হক মিজান বলেন, বাবলীকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার মা পারুল বেগম বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন, বাবলীর বান্ধবী আছিয়া আক্তার জয়া, জয়ার মা ফাতেমা আক্তার সুমি ও বাবলীর কথিত প্রেমিক হৃদয়। মামলার পর জয়ার মা সুমিকে পুলিশ রাতে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, পারুল বেগম ঢাকায় পার্লারের ব্যবসা করেন। পরীক্ষার পরই বাবলীর ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। ১৯৯৮ সালে বাবলীর বাবা মো. বখতিয়ারের সঙ্গে পারুল আক্তারের বিয়ে হয়। শুধু মেয়ে হওয়ার কারণে বাবলীর জন্মের ছয় মাসের মাথায় তার মুখ, কান, পা ও পায়ুপথে ওষুধ খাওয়ার ড্রপারে করে পাঁচ দিন ধরে অ্যাসিড ঢেলে দিয়েছিল তার বাবা।
এরশাদ/এফএ/পিআর