দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ওরা এখন নিয়মিত স্কুলে যায়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৮:১২ এএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এখন তিন শতাধিক ছাত্রী বাইসাইকেল চালিয়ে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আসা করছে। সাইকেল পেয়ে প্রত্যন্ত এলাকার এসব ছাত্রীদের মুখে এখন আত্মবিশ্বাসের ছাপ। আর তাদের দেখে উৎসাহিত হচ্ছে অন্য ছাত্রীরাও। এই উদ্যোগ নারী শিক্ষার অগ্রগতি ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র প্রসারিত করবে বলে ধারণা সচেতন মহলের।

জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গত বছর থেকে বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দরিদ্র ছাত্রীদের মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ প্রকল্প চালু করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন হাই স্কুলে এখন পর্যন্ত ৩১০ জন ছাত্রীকে সাইকেল দেয়া হয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে এই প্রকল্প চলমান রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দরিদ্র ছাত্রীরা পাচ্ছে বাইসাইকেল। সাইকেল পাওয়ায় যারা আগে ৪/৫ কি.মি হেঁটে স্কুলে আসতে পারতো না, তারা এখন ক্লাস করছে নিয়মিত।

Molvibazar5

ফলে নারী শিক্ষার হার বাড়ছে। আর গ্রামীণ এলাকার শিক্ষা ক্ষেত্রে এসেছে নতুন মাত্রা। প্রকল্পের শুরুতেই মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবে তা অনেকেই মানতে পারেনি, কিন্তু দিনে দিনে পাল্টে গেছে এর চিত্র। এখন সবাই তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

এই প্রকল্প থেকে সাইকেলপ্রাপ্ত উপজেলার তেঁতই গাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী বিরাজমনি জানায়, স্কুলে আসতে পাঁচ কিলোমিটার পথের পুরোটাই হাঁটতে হতো। দুর্গম কামার ছড়া চা বাগানের পথে পথে ছিল নানান বিড়ম্বনা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হতো, ক্লান্ত শরীর নিয়ে পড়ার টেবিলে মনযোগ দেয়া সম্ভব হতো না।

Molvibazar5

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে তারা চিন্তায় থাকতেন, কারন দুর্গম পথে ৪/৫ কি.মি হেঁটে বাড়িতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে যেত, অনেকে আবার মেয়েদের জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করতেন। কিন্তু সাইকেল পাবার পর তারা এখন চিন্তামুক্ত। হাসি মুখে মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছেন।

সাইকেল চালিয়ে রাস্তা পাড়ি দেয়ার কারণে পথে পথে নেই ইভটিজিং নামের মানসিক যন্ত্রণা, যার ফলে নিজের মতো করে নিজেকে বিকাশ করতে পারছে কিশোরীরা। বাড়ছে আত্মবিশ্বাস।

Molvibazar5

সচেতন নাগরিকরা এই উদ্যেগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের অভিমত এই প্রকল্পের ফলে নারী পুরুষের যে পার্থকের বীজ কিশোরমনে রোপন করে দেয়া হয় তা থেকে মুক্তি পাবে এই এলাকার কিশোরীরা। বড় হয়ে ছেলেদের পাশাপাশি সমাজ গঠনে বা নিজ নিজ কর্মস্থলে আত্মবিশাস তাদের এগিয়ে রাখবে।

স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন জানালেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে নারী শিক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনেও ভূমিকা রাখছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নারী শিক্ষার হার।

Molvibazar5

প্রকল্পের উদ্যোক্তা কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে জানান, এই উদ্যোগে নারী শিক্ষার অগ্রগতির পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে। পর্যায়ক্রমে আর বিস্তৃতি ঘটবে চলমান প্রকল্পের।

এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।