নওগাঁয় দফায় দফায় বাড়ছে চালের দাম
আমনেও সুখ নেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এখনও বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। নতুন ধানে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার কথা থাকলেও নওগাঁয় তার চিত্র পুরোটাই উল্টো। দফায় দফায় চালের দাম বেড়েই চলেছে। কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার ঘুরে জানা গেছে, স্বর্ণা ৫০ কেজি ওজনের বস্তার দাম ২ হাজার টাকা, রনজিত ২ হাজার ৩০০ টাকা, জিরাশাইল ২ হাজার ৭০০ টাকা, ৪৯ চাল ২ হাজার ৩০০ টাকা, ভারতীয় কাটারি ২৫ কেজি ওজনের বস্তা এক হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২-৫ টাকা লাভে। বর্তমান বাজারে এলসির আমদানি করা কোনো চাল নেই।
দেশে কয়েক দফায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এতে বাজারে ধানের সংকট দেখা দেয়। যেটুকু ধান বাজারে পাওয়া যায় বড় বড় মিল মালিকরা তাদের মিল সচল রাখতে বাজার থেকে বেশি দামে ধান কিনে রেখেছেন বলে জানা গেছে। ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এ সুযোগে কিছু ব্যবসায়ীরা চালের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। ফলে বাজারে চালের দামও বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় সাধারণদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২ লাখ ১৪০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ করা হয়েছিল। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাদে ১ লাখ ৬১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হলেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯৭ হাজার হেক্টর জমি। ক্ষতির কারণে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়েছে।
মান্দা উপজেলার মহানগর গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমনের আবাদ করেছিলাম। ধানের ফলন হয়েছিল বিঘাপ্রতি ১৫-১৬ মণ। ধানে রোগ বালাইয়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমন স্বর্ণা-৫ জাতের ধানের দাম মান ভেদে বর্তমান বাজারে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকা। পুরনো ধানের বাজার (জ্যৈষ্ঠ) দাম এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। তবে ফলন ভালো এবং ভালো দাম পাওয়ায় খুশি। দীর্ঘদিন পর কৃষকরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন তরফদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশে প্রায় ৫০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি আছে। ভারত থেকে চাল আমদানি করায় বাজার কিছুটা স্থিতিশীল আছে। গত এক সপ্তাহ আগে ভারতে চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩৬-৩৭ টাকা। এখন সেই চাল প্রায় ৩৮-৩৯ টাকা। বাজারে ধান সংকট এবং দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, জেলায় প্রায় এক হাজার ২০০টি চালকল আছে। এর মধ্যে ৫৫টি অটোমেটিক রাইস মিল। বাকিগুলো হাসকিং মিল। আর বেশির ভাগ হাসকিং মিলগুলো ধানের অভাবে বন্ধের উপক্রম।
নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল বাজার সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, গত একমাসে চালের বাজারে দামের কোনো পরিবর্তন হয়নি। চালের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ক্রেতা কম। চালের বাজার স্বাভাবিক হতে অপেক্ষা করতে হবে।
মেসার্স ফারিহা রাইস মিলের স্বত্ত্বাধিকার শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম কমাতে হলে ওএমএস, টিআর কাবিখাসহ সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি চালু করতে হবে। আমনের ধানের চাল বাজারে এখনো আসেনি। এজন্য চালের দামে এখনও কোনো প্রভাব পড়েনি। চালের দাম কমতে আগামী বোরো ধানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নওগাঁ চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, ঘাটতি থাকলে যা হয় আর কী। আমাদের দেশ আমদানি নির্ভরশীল। বাহিরের দেশের ওপর আমাদের চালের বাজারের দাম নির্ভর করে। আমদানি চালু থাকলেও বাজার কমবে না বরং দু’চার টাকা বাড়বে। কারণ ভারতের বাজারে চালের দাম বেশি।
আব্বাস আলী/আরএআর/এমএস