সিরাজগঞ্জে ৩৫২ কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ, দুর্ভোগ চরমে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৪:৪৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বর্তমান সরকার গ্রামের নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে গ্রামীণ চিকিৎসাসেবা কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। ইতোমধ্যে গ্রামীণ চিকিৎসাসেবাকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছে। ক্লিনিকগুলো থেকে রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০ প্রকার ওষুধও বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

কিন্তু হঠাৎ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপিরা) আন্দোলন শুরু করায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৯টি উপজেলার ৩৫২ কমিউনিটি ক্লিনিক টানা ২২ দিন ধরে বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়েছে তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা।

বিজ্ঞাপন

বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষ ঠান্ডাজনিত রোগে চিকিৎসা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ থাকায় সেবা পেতে রোগীরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ নানা বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটছেন।

সিভিল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশের ন্যায় সিরাজগঞ্জে জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের পর সরকার জনবল, চিকিৎসক নিয়োগ ও ওষুধ সরবরাহ শুরু করে। এরপর ক্লিনিকগুলোতে শুরু হয় স্বাস্থ্যসেবা।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

কিন্তু হঠাৎ করে গত ২০ জানুয়ারি থেকে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪৪, বেলকুচিতে ৩৭, শাহজাদপুরে ৫২, কাজীপুরে ৫১, কামারখন্দে ১৬, তাড়াশে ২৫, রায়গঞ্জে ৪৭, উল্লাপাড়ায় ৬৫, চৌহালীতে ১৫টিসহ ৯টি উপজেলার ৩৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে ৩৫২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলন শুরু করেন। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা গ্রামের শত শত রোগী পড়েছেন চরম বিপাকে।

কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা শিয়ালকোল ইউনিয়নের শিলন্দা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক তোরাব আলী, আলমগীর হোসেন, সানজিদা বেগম ও স্থানীয় দোকানী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ২২ দিন ধরে ক্লিনিক বন্ধ রয়েছে। প্রতিদিন সকালে ২০/২৫ জন শিশু, বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ রোগী এসে ক্লিনিক বন্ধ দেখে ফিরে যাচ্ছে। ক্লিনিক বন্ধ থাকায় রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

শিয়ালকোলের শিলন্দা গ্রামের বৃদ্ধা আয়শা খাতুন বলেন, কয়েকদিন হলো ঠান্ডা জ্বরে ভুগছি, শুনেছি ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আন্দোলন শুরু করেছেন। তাই ক্লিনিকগুলো বন্ধ। এ কারণে ৪০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে জেলা শহরের সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আমার নাতি হজরতের জ্বর হয়েছিল চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন নিউমোনিয়া হয়ে গেছে। সে কারণে জেলা সদরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের অ্যাসোশিয়েশন সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক শিফাত আহমেদ খানবলেন, চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে সিরাজগঞ্জের সিএইচসিপিরা এখন ঢাকায় অবস্থান করায় সব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরব না।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. কাজী শামিম হোসেন জানান, ভোগান্তি লাঘবে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চলছে। তবে উপজেলা পর্যায়ের সব চিকিৎসকদের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের চিকিৎসা দেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এএম/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।