সংবাদকর্মীকে চা খেতে এক হাজার টাকা দিলেন শিক্ষা অফিসার
সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে চা খাওয়ার জন্য সংবাদকর্মীর পকেটে জোরপূর্বক এক হাজার টাকার একটি নোট গুঁজে দিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী।
সদর উপজেলার এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সোমবার দুপুরের পর তার কার্যালয়ে গেলে তিনি এই প্রতিবেদককে এভাবেই ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পদে পদে ঘুষ বাণিজ্য, নানান কৌশলে টাকা আদায় ও বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার রেট নির্ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে।
এছাড়াও এই শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে শিক্ষক, কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পিটিআই ট্রেনিং, ছুটির জন্য এমনকি অবসরের পর পেনশনের টাকা তুলতেও ঘুষ বাণিজ্য চলছে অবাধে।
কোনো শিকক্ষ, কর্মচারী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে যেন মহাখুশি শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলী। কারণ তদন্তের নাম করে সেখানে বাণিজ্য করেন তিনি। সেই সব অভিযোগ তদন্ত করাতে যেমন টাকা লাগে, তেমনি তদন্ত টিমের কার্যক্রম থামিয়ে দিতেও টাকা ছাড়া কাজ হয় না এ কর্মকর্তার কাছে। শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা রুটিন পরিদর্শনে গেলেও তাকে খুশি করতে হয়।
ঘুষ লেনদেন বাণিজ্য সফল করতে সহকারী শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলমসহ কয়েকজন কর্মচারী গড়ে তুলেছে আলাদা একটি সিন্ডিকেট। এই ঘুষের পরিমাণ ১৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, টাকা ছাড়া শিক্ষকের ছুটির আবেদনেও স্বাক্ষর না করার।
এছাড়াও টাকার বিনিময়ে জুনিয়র শিক্ষক/শিক্ষিকাদের পিটিআই ট্রেনিংয়ের সুযোগ করে দিচ্ছেন তিনি। অথচ আবেদন করেও দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না সিনিয়র শিক্ষকরা। এমন অভিযোগ অহরহ তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, স্কুলের নামে সরকারি কোনো বরাদ্দ এলেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ২০% কমিশন দেয়া লাগে। না দিলে বরাদ্দ উত্তোলন করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে বরাদ্দ তোলার জন্য দিতেই হয়। এছাড়াও স্লিপের টাকার (স্কুল উন্নয়ন) অর্ধেক নিয়ে নেন তিনি। অথচ ওই টাকা সরকার দিয়ে থাকেন স্কুলের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য।
নাম প্রকাশ না করতে একাধিকবার অনুরোধ জানিয়ে সদর উপজেলার এক শিক্ষিকা জানান, অসুস্থজনিত কারণে ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়ার জন্য ছুটির আবেদন করলে স্বাক্ষর করার জন্য ১০ হাজার টাকার চান লিয়াকত স্যার। টাকা না দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি মঞ্জুর করায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তিনি। সেই ছুটির আবেদন গ্রহণ করতেও এখন ১০ হাজার টাকা চাচ্ছেন তিনি। শুনেছি তিনি শিক্ষকদের কাছে ৫০ টাকাও ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার লিয়াকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা। কোনো অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফুল্ল বাবু জানান, আমি অসুস্থ। ঘুষ বা অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহাজাহান সিদ্দিক জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসারে বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রিপন/এমএএস/আইআই