বছরে শত কোটি টাকার আতর যাচ্ছে বিদেশে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

মৌলভীবাজারের আগর গাছ থেকে তৈরি হচ্ছে মূল্যবান তরল আতর। ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশেই চড়া দামে রফতানি হচ্ছে পণ্যটি। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা অন্যতম এক শিল্পখাত আগর। এটি মৌলভীবাজারের সবচেয়ে বিস্তৃত শিল্প। এরকম ব্যপক আর সংগঠিত অন্য কোনো শিল্প মৌলভীবাজারে নেই।

দেশের নিবন্ধিত ১২১টি আগর তৈল তৈরির কারখানার মধ্যে সিলেটে রয়েছে ২টি। বাকি সবগুলো মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর আগর উৎপাদনের এলাকা হিসেবে দেশে বিদেশে পরিচিত।

স্থানীয় আতর ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, আগর থেকে আতর উৎপাদনে আধুনিক কোনো পদ্ধতি এখনও ব্যবহার হচ্ছে না। এখানে কোনো আধুনিক পরীক্ষাগার নেই। আগর থেকে উৎপাদিত প্রতি তোলা আতরের দাম ৬ হাজার টাকার বেশি।

আতর ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বৈধ উপায়ে নানা হয়রানির শিকার হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আতর রফতানি করছেন, কেউ কেউ যাত্রীদের মাধ্যমেও বিদেশ পাঠাচ্ছেন। যার ফলে সিলেট আঞ্চলিক রফতানি ব্যুরোর কাছে নেই এর সঠিক হিসাব।

বড়লেখা আতর-আগর ব্যবসী সমতিরি সভাপতি আনছারুল হক জানান, তাদের রফতানির পরিমাণ বছরে ১০০ কোটি টাকার উপরে। তাদের তৈরি আতর সৌদি আরব, ইরাক, ইরান, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রোচ্যের প্রতিটি দেশ ছাড়াও ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। বিদেশে আতরের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তারা সে অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছেন না। আবার যতটুকু উৎপাদন করছেন, তাও সরবরাহ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রয়াজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আগর ক্লাস্টারকে দেশের রফতানি পণ্যের শীর্ষে নিয়ে আসা সম্ভব বলে জানান তিনি।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মৌলভীবাজার জেলার মধ্যে আগর ব্যবসার মূল কেন্দ্র বড়লেখা উপজেলায় ১১১টি, কুলাউড়া উপজেলায় ৬টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ২টি এবং সিলেট সদরে ২টি আগরের কারখানা রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে ৩০/৩৫ জন ব্যবসায়ী আগর উৎপাদন করে আসছেন। তারা তাদের উৎপাদিত আগর তেল স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। তাই সরকারি কোনো হিসাবে আসেন না। এসব আগরের কারখানার মধ্যে শুধুমাত্র সিলেটের দুটিতে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। অন্য ১১৯টি কারখানায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহৃত হয়।

মৌলভীবাজারের সুজানগরে ৩৫০টির বেশি ছোট-বড় আতর তৈরির কারখানা রয়েছে। এ শিল্পে জড়িত ৩০-৩৫ হাজার নারী-পুরুষ। সুজানগর, বড়থল, রফিনগর ও হালিজপুর গ্রামে আগর চাষ হচ্ছে। মৌসুমি ব্যবসা হওয়ার কারণে এখানকার নারী-পুরুষরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। প্রতিটি শ্রমিক দৈনিক ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন।

প্রায় ৩০০ বছর আগে থেকে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সুজানগরের আগর-আতর ক্লাস্টারের সমাদর রয়েছে। আরব বণিক থেকে ভারতীয় ব্যবসায়ী সবাই ছুটে এসেছেন এর সুবাস নিতে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ সবখানেই এখানকার আতরের কদর রয়েছে।

আগর-আতর উৎপাদনকারীরা জানান, আগর গাছের ছাল-বাকলসহ সব অংশই মূল্যবান। বেশি আতর পেতে প্রতিটি আগর গাছে ২ ইঞ্চি পর পর পেরেক মারা হয়ে থাকে। গাছ বড় হওয়ার পর সেটি ছোট ছোট টুকরো করা হয়। এসব টুকরো তিন মাস পর্যন্ত ভিজিয়ে রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে চুলার মাধ্যমে দীর্ঘক্ষণ তাপ দিলে সেখান থেকে এক ধরনের রস বের হয়। ওই রসের উপরিভাগের তৈলাক্ত অংশ হাত দিয়ে তুলে উৎপাদন করা হয় আতর।

এফএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।