ঈদ আনন্দ নেই মৌলি-মৌসির
নড়াইলের মৌলি মৌসির নেই ঈদ আনন্দ। নিজেরা কাদছে, কাদাচ্ছে সবাইকে। ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও মহসিন সিকদারের পরিবারে আনন্দ নেই। গত ৩০ নভেম্বর কালিয়া উপজেলার কলিমন বাসগ্রামে বিবদমান দুটি পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষরা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে।
সরেজমিনে মহসিনের বাড়িতে দেখা যায়, তার ছোট দুটি বাচ্চা বারান্দায় বসে খেলা করছে। স্ত্রী লাভলী বেগম কেঁদে কেঁদে কার সঙ্গে যেন কথা বলছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি আরো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, প্রতি দিন রাতে বাচ্চা দুটো তার আব্বুকে খোঁজে। না পেয়ে কাঁদতে থাকে।
মহসিনের মৃত্যুর ঘটনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ভাগ্নে তার নিজ মামাকে কুপিয়ে খুন করতে পারলো? একটুও হাত কাঁপলো না? এরা মানুষ, না পশু? ভাবতেও কষ্ট হয়। বড় হয়ে আব্বার কথা জানতে চাইলে অবুঝ শিশু দুটিকে আমি কি বলে শান্ত্বনা দেবো?
তিনি আরো জানান, ছেলে হারানোর শোক সইতে না পেরে কিছুদিন পর মাও (শ্বাশুড়ি) মারা গেলেন। মৌলির আব্বাকে কতবার বলেছি দলাদলি করো না। ঘটনার দিন কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। সেই যে গেলো আর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরলো।
দুঃসহ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে অঝরে কাঁদতে লাগলেন লাভলী বেগম। তার কান্না দেখে প্রতিবেশিরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
প্রতিবেশি রমজান আলী জাগো নিউজকে জানান,সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত সিকদার, বাসগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও চাচুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান একপক্ষ। এই তিন এলাকার আধিপত্য নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হীরক মোল্যা, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল মোল্যা ও নান্না মোল্যার সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর চাচুড়ি ইউনিয়নের কলিমন বাসগ্রামে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ভদ্রবিলা ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মহসিন সিকদার নিহত এবং ৩০ জন আহত হন।
তিনি আরো বলেন, মারামারির সময় মহসিনের আপন ভাগ্নে নান্না মোল্যার ছেলে মেহেদী তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এদিকে ঈদ আসতে মাত্র ১দিন বাকী। এজন্য বেশি বেশি কষ্ট লাগছে বলে লাভলী বেগম কাঁদতে লাগলেন। কারণ মহাসিন সিকদারের মৃত্যু পর এটিই প্রথম ঈদ এটি।
হাফিজুল নিলু/এসএস/এমএস