জেলখাটা আসামি এখন কবিরাজ, প্রতিদিন আয় লক্ষাধিক টাকা
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের তারালী ইউনিয়নের বাথুয়াডাঙ্গায় সহিংসতা মামলার জেলখাটা আসামি আরিজুল ইসলাম এখন কথিত কবিরাজ। ঝাড়ফুঁক দিয়ে মানুষের কঠিন রোগ নিমেষেই শেষ করে দেন বলে দাবি তার।
অভিযোগ উঠেছে, কথিত এ কবিরাজের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন অদ্ভুত কাণ্ড চালালেও কারো নজরদারি না থাকায় নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন ঝাড়ফুঁক ব্যবসা।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিনুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ৫/৭ বছর আগে এদের অবস্থা খুব শোচনীয় ছিল। রোগী আসলে বিভিন্ন তদবির দেয়া হয়। পাখি না হয় ব্যাঙ, না হয় বিভিন্ন গাছগাছালি পাশের দোকানে পাওয়া যায়। হরিণের চামড়া দিয়ে ওষুধ দেয়া হয়। এক হাজার থেকে সাতশ-আটশ টাকার নিচে কারোর বিল হয় না। এখন এরা অনেক টাকার মালিক। কেউ এখন সামনা-সামনি কিছু বলতে সাহস পায় না।
তিনি আরও জানান, কথিত কবিরাজ আরিজুল ইসলাম সহিংসতা মামলায় ২০১৩ সালে জেল খেটেছেন। লেখাপড়া করেছেন নবম শ্রেণি পর্যন্ত। ৭ বছর ধরে ঝাড়ফুঁক দিয়ে সারিয়ে দিচ্ছেন জটিল ও কঠিন সব রোগ।
ঝাড়ফুঁক, তদবির, তেলপড়া, গাছগাছালি দিয়ে ওষুধ বানানোর নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সহজ-সরল ব্যক্তিদের ঠকিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা।
গ্যাস্টিক, আলসার, ধাতুগত রোগ, শ্বাসকষ্ট এছাড়া জিনের কোনো উপদ্রব থাকলে সেগুলো আলাপ করে তদবির দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ কবিরাজি অপচিকিৎসা।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু বকর বলেন, এখানে রোগী আসে অনেক। বিভিন্ন তদবির দেয়া হয়। তবে আমি এসবে বিশ্বাস করি না।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কবিরাজ আরিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে রোগী দেখি তা হলো গ্যাস্টিক, আলসার, ধাতুগত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, এছাড়া জিনের কোনো উপদ্রব থাকলে সেগুলো আলাপ করে তদবির দেয়া হয়।
এছাড়া আমি একশ রোগী দেখলে ১০ জন রোগী খারাপ হতে পারে। ডাক্তারের কাছে গেলেও এ ধরনের সমস্যা হয়। সব রোগী আমার কাছে এসে ভালো হবে এমন তো কথা নেই।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকের অফিসার প্রবীর মুখার্জী বলেন, আসলে গুণী বা কবিরাজের রোগ সারানোর কোনো ক্ষমতা নেই। অজ্ঞতার কারণে মানুষ তার কাছে যায় ও চিকিৎসা নেয়। মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়েই এসব কবিরাজ সর্বসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করে।
বিষয়টি অবহিত করলে সাতক্ষীরার সিনিয়র এএসপি (কালিগঞ্জ সার্কেল) মির্জা সালউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আরিজুল কবিরাজের বিষয়ে কেউ কখনো লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আকরামুল ইসলাম/এএম/পিআর