ঘুণেধরা খাট ও হুইল চেয়ারই সম্বল সাবেক এমপির

আবদুল্লাহ রাকীব
আবদুল্লাহ রাকীব আবদুল্লাহ রাকীব , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৪:১৫ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৮

নেই কোনো প্রাসাদসম অট্টালিকা। নেই বিলাসবহুল খাট। ৫ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের ছোট একটি কক্ষেই কাটাচ্ছেন অসুস্থ জীবন। গত ১০ বছরে ঘুণেধরা খাটেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ।

বর্তমান যুগে একজন সংসদ সদস্যের বৃহৎ অট্টালিকা, দামি গাড়ি ও বিলাসবহুল জীবনযাপন একেবারেই স্বাভাবিক। সেখানে ভাঙা খাট, হুইল চেয়ার ও এক জোড়া কাপড়েই যেন জীবনের সব সুখ খুঁজে পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান এ নেতা।

ব্যক্তি জীবিনে নিঃস্ব এ নেতার নিজের নামে নেই কোনো জায়গা সম্পত্তি। পৈতৃক বাড়ি বলতে ছিল ছোট কুঁড়েঘর। নিজের পাওয়াটুকু দান করে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে পটিয়ার কমান্ডার শাহ আলমের নেতৃত্বে মোহাম্মদ ইউসুফ ছিলেন একজন গেরিলা যোদ্ধা। বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নিতেন না কোনো ভাতা।

yousuf

রোববার সরেজমিনে রাঙ্গুনিয়ার মরিয়মনগরের কলেজ রোডে গিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্যের জীবন-যাপনের এমন দৈন্যদশা দেখা যায়। বর্তমানে সৎভাইদের তত্ত্বাবধানে তিনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংসদ সদস্য থাকাকালীন বাসেই যাতায়াত করতেন। ছিল না কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি। স্বাধীনতার পর টানা ২০ বছর টায়ার দিয়ে বানানো জুতাই পরতেন তিনি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় এক আত্মীয়ের দেয়া পাঞ্জাবি-পায়জামা দিয়ে ছয় মাস কাটিয়েছেন।

আদর্শবান এ রাজনৈতিক নেতা দল ও জনগণের কাজে সদা ব্যস্ত থাকতেন। ২০০০ সালে এক কাপড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে, সেই বেশেই হঠাৎ একদিন মাকে দেখতে বাড়ি আসেন। রাত কাটিয়ে পর দিন চলে যান মহান এ নেতা। রাজনীতির জন্য নিজেকে এতোটাই উৎসর্গ করেছিলেন, যার কারণে বিয়েও করেননি তিনি।

সংসদ সদস্য হওয়ার আগে থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির তুখোড় নেতা ছিলেন তিনি। কর্ণফুলী জুট মিলে সিবিএ নেতা থাকাকালীন শ্রমিকদের বকেয়া টাকা আদায়ের দাবিতে ছিলেন সোচ্চার। তাকে আন্দোলন থেকে দূরে থাকতে ১০ লাখ টাকা ও একটি ভবন দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে রাজনীতি করা কমরেড আবদুল আজিম। শেষ পর্যন্ত মামলা করে শ্রমিকদের বকেয়া আদায় করেন তিনি।

নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য ইউসুফের ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অহংকারহীন এ মানুষটি সংসদ সদস্য হলেও পুলিশ সুরক্ষা ছাড়াই নিজ নির্বাচনী আসনে ঘুরে বেড়াতেন। মানুষের রান্নাঘরেও ছিল তার বিচরণ।

সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত ৬৬ বছর বয়সী এ সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফের জীবন আজ মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেকে)।

তার সুচিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে চমেকের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাকে রাখা হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন তার ভাই মোহাম্মদ সেকান্দার।

তিনি জানান, শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। 

এমএএস/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।