খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন চলছেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৬ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০১৮

বকেয়া মজুরির দাবিতে গত ছয়দিন ধরে খুলনার ৮টি পাটকল শ্রমিকদের রাত-দিন কাটছে রাস্তায় আন্দোলন করে। তাদের পরিবারে চলছে হাহাকার। বছরের শুরুতে এমন পরিস্থিতিতে তাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবারও খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে সড়ক অবরোধ, টায়ারে আগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এদিন ক্রিসেন্ট, স্টার, ইস্টার্ন, খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিলে শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হলেও দেয়া হয়নি প্লাটিনাম, আলীম ও জেজে আই জুট মিলে। ফলে প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। দুপুরে নিজেরাই খিচুড়ি রান্না করে রাস্তায় খেয়েছে শ্রমিকরা।

প্লাটিনাম জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন বলেন, দাবি আদায়ে সিবিএ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছে।

শ্রমিকরা জানান, মজুরি না পেয়ে অভুক্ত অবস্থায় উৎপাদন অব্যাহত রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। নিরুপায় হয়েই তারা উৎপাদন বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন। বকেয়া সব মজুরি এক সঙ্গে না পাওয়া পর্যন্ত তারা কাজে ফিরে যাবেন না।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ব ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম ও যশোরের জেজেআই জুট মিল চালু থাকলে প্রতিদিন প্রায় ২২৫ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হত। সেই হিসেবে গত ৬ দিনে ১ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন বিঘ্নিত হয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।

৮টি পাটকলের ২৬ হাজার ৭১৮ জন শ্রমিকের ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৮টি পাটকলে বর্তমানে ২১ হাজার ৪৭৪ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২১৫ কোটি টাকা।

প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ’র সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, মজুরি না পেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটানো শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ বকেয়া টাকা প্রদানের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া সব মজুরি এক সঙ্গে পরিশোধ না করা পর্যন্ত কেউ কাজে ফিরে যাবে না।

আলীম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম লিটু বলেন, মিলের শ্রমিকরা না খেয়ে রয়েছে। তাদের পরিবারে হাহাকার বিরাজ করছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে খালিশপুরে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত সকল পাটকলের নেতারা বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয়ে লিয়াজো কর্মকর্তার সাথে বৈঠক হয়েছে। তিনি কর্মবিরতি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে শ্রমিকরা মজুরি না পেয়ে কাজে যোগদান করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের লিয়াজো কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের পাওনার পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা। উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রয় করা হয়েছে। বিক্রয়ের অর্থ পাওয়া গেলে পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

আলমগীর হান্নান/আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।