শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে কক্সবাজারের ঈদবাজার
আর মাত্র দু’দিন বাকি। শেষ সময়ে এসে উৎসবের আমেজ ছড়াতে কেনা কাটায় মনোযোগী হয়েছেন কক্সবাজারের সব শ্রেণির মানুষ। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে যে বন্যা হয়েছে তার ক্ষতি কাটাতে না পারলেও অনেকে বাড়ির কনিষ্ট সদস্যদের চাপাচাপিতে ধার-দেনা করে হলেও বাজারে পা ফেলছে। এতে শেষ মূহুর্তে জমে উঠেছে কক্সবাজারের ঈদবাজার। ফলে জেলা, উপজেলা ও পৌর শহরের বাণিজ্যিক এলাকার বিপণি বিতানগুলো এখন লোকে লোকারণ্য।
জেলা শহরের ফজল মার্কেট, সমবায় সুপার মার্কেট, এ ছালাম মার্কেট, নিউ মার্কেট, ইডেন গার্ডেন সিটি, সী-কুইন মার্কেট, আপন টাওয়ার, ফিরোজা শপিং কমপেক্স, পৌর সুপার মার্কেট, বাটা মার্কেট, ডাবা বাজার, মসজিদ মার্কেট ও হকার মার্কেটসহ একাধিক বিপণি বিতান ঘুরে দেখা গেছে, বিপণি বিতানগুলোর বেশির ভাগ দোকানে নানা বয়সী নারী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তাল মিলিয়ে আসছে কিশোর ও তরুণরাও। ঈদে পোশাকে মধ্য বয়সী কিংবা নব বিবাহিতা নারীরা বিভিন্ন নামী-দামী ব্যান্ডর শাড়ি খুঁজলেও তরুণী ও কিশোরীদের এক প্রধান পছন্দ ‘কিরণমালা’।
আর ছোটদের জন্য খোঁজ করা হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নামে শিশু পোশাক ‘মোদি ড্রেস’। এসবের সাথে কেউ কেউ চাচ্ছেন পুরনো বছরের আনার কলি, পাখি, কটকটি, ঝিলিক, ফুলকলি, শিপন, থ্রি-পিস, জিন্স প্যান্ট, জামদানি শাড়ি, বেনারশি, কাতানসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের পোশাক।
ফজল মার্কেট দোকান মালিক সমিতির নেতা ও অংকুর বিপণি বিতানের মালিক কামরুল হাসান জানান, গত ঈদে পাখি আর এবারের ঈদবাজার দখল করেছে ‘কিরণমালা’। পাশাপাশি দেশীয় পোশাকের চাহিদা কম নয়। সাম্প্রতিক বন্যা এবারের ঈদ বাজার ধ্বংস করে দিয়েছে। এরপরও শেষ মূহূর্তে কিছুটা ক্রেতার ভিড় বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও স্বস্থির নিশ্বাস ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।
শুধু কাপড় নয় পাল্লা দিয়ে বিক্রি বেড়েছে পাদুকারও। শহরের পান বাজার সড়কস্থ বাটা, ডাটা, মসজিদ মার্কেট গুলো দেশি-বিদেশি কোম্পানির নানা ডিজাইনের জুতোর পসরা সাজিয়ে রেখেছে। বেড়েছে প্রসাধন সামগ্রীর বিক্রিও।
এ ছালাম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কর্মকর্তা ও স্টার প্লাস সপের মালিক মুহাম্মদ মুরাদ বলেন, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা আর এ বছর ভোগিয়েছে বন্যা। শেষ সময়ে হলেও এখন কিছুটা আলোর মুখ দেখছেন ব্যবসায়ীরা। কাপড়ের পাশাপাশি পাদুকা, প্রসাধনসহ প্রয়োজনীয় সব ধররের পণ্য বিকিকিনি বেড়েছে।
বৃষ্টি বন্ধ থাকায় জেলার আট উপজেলার মার্কেট গুলোতে একই চিত্র বিরাজমান বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। গ্রামেও কিরণমালার আগ্রাসন চলছে বলে দাবি করেছেন তারা।
এদিকে চুরি-ছিনতাই ও ইভটিজিং প্রতিরোধে বিপণি বিতানগুলোর সামনে ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুকুল।
তিনি বলেন, সমিতিভুক্ত ৪৩ মার্কেটে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত বলয় রয়েছে। তাদের সাথে রয়েছে আমাদের নিজস্ব কর্মীও।
তবে ক্রেতাদের অভিযোগ মার্কেটগুলোতে টিনেজ ছেলেদের আনাগোনা বেশি। এরা সুযোগ বুঝে মেয়েদের টিজ করছে। পাশাপশি অনেক মার্কেটের ভেতরে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা। অনেক সময় নানা বিশ্রী পরিস্থিতির আশংকায় তারা হয়রানির ব্যাপারে কোথাও জানান না বলে উল্লেখ করেন। তাদের দাবি মার্কেটের সামনে অনেক পুলিশ সদস্য দাড়িয়ে থাকতেও ইভটিজারদের ব্যাপারে পুলিশের তেমন ভূমিকা দেখা যায় না।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানিয়েছেন, ঈদে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি আগে থেকেই নেয়া হয়েছে। প্রতিটি মার্কেটের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। আগে থেকেই বলা হয়েছিল, কেউ কোথাও কোন ধরনের হয়রানির শিকার হলে পুলিশকে অবহিত করতে। অভিযোগ পাবার পরও ব্যবস্থা না নিলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, শুধু মার্কেট নির্বিঘ্নকরণ নয় চলাচলেও প্রশান্তি দিতে সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা।
সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমআরআই