নতুন বই পেলেন ২য় শ্রেণির ৬ বৃদ্ধ ছাত্র

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ০২ জানুয়ারি ২০১৮

শিক্ষা গ্রহণের কোনো বয়সসীমা নেই। সেটা আবারও প্রমাণ করলেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের ১১ জন বৃদ্ধ। তারা প্রতিনিয়ত সময় ও নিয়ম মেনে ইউনিফর্ম পরে স্কুলে আসছেন। নাতি-নাতনির বয়সী শিশুদের সঙ্গে গ্রহণ করছেন প্রাথমিক শিক্ষা। তারা চোখ থাকতে অন্ধ হতে চান না, দিতে চান না টিপসই। তাই শেষ বয়সে এসেও শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

সোমবার নতুন বছরের প্রথম দিন শিশুদের পাশাপাশি ওই বৃদ্ধ ছাত্রদের মধ্যে ছয়জন যোগ দেন বই উৎসবে। গ্রহণ করেন নতুন বই।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের দারিয়া এলাকায় মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নতুন বই নিচ্ছেন ছয় বৃদ্ধ।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের পাশাপাশি ১১ জন বৃদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন তারা। এক বছর থেকে স্কুলের নিয়ম কানুন মেনে নিয়মিত নাতি-নাতনির বয়সী ছোট শিশুদের সঙ্গে ক্লাস করছেন তারা। অংশ নিচ্ছেন শরীর চর্চাসহ বিভিন শিক্ষা কার্যক্রমে। শিশুদের সঙ্গে গলা ছেড়ে জাতীয় সঙ্গীতও পরিবেশন করছেন। তারা খুব আগ্রহের সঙ্গেই ক্লাসে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।

old student

এই ১১ শিক্ষার্থী হলেন- নবাবগঞ্জ উপজেলার আমবাগান এলাকার বাদশা মিয়া (৫১), একই এলাকার বদিয়াজ্জামান (৬৩), মাহমুদপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ (৫৬), একই এলাকার ইলিয়াস মিয়া (৭১), সিদ্দিক মিয়া (৬৬), আমবাগান এলাকার আসাদ মিয়া (৪৭), মেম্বারপাড়া এলাকার শাহিনুর আলম (৪৭), একই এলাকার আব্দুল লতিফ (৪৯) ও সোনারপাড়া এলাকার লাল মিয়া (৪৭), মগোরপাড়া গ্রামের বজলুর রশিদ (৫৪) ও আব্দুর রাজ্জাক (৬০)।

এদের মধ্যে- সিদ্দিক মিয়া, বজলুর রশিদ, শাহিনুর আলম, আব্দুল লতিফ, বাদশা মিয়া ও বদিয়াজ্জামান প্রথম শ্রেণি পাস করে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উঠেছেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় এই ছয়জন নতুন বই নেয়ার জন্য স্কুলে আসেন। শিক্ষকরা তাদের হাতে নতুন বই তুলে দেন।

ওই ছয় বৃদ্ধ শিক্ষার্থী বলেন, পাস করা এবং নতুন বই পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। আমাদের মনে হচ্ছে, আমরা যেন শিশু বয়সে ফিরে গেছি। শিক্ষকরাও আমাদেরকে অনেক সম্মান দিয়ে পড়া লেখা করিয়ে থাকেন। আমরা এই স্কুলের শিশু ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ যে তারা আমাদেরকে সহজভাবে নিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন। আমরা পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই।

৬৩ বছর বয়সী বদিয়াজ্জামান জানান, তার স্ত্রী খুব সকালে উঠে খাবার তৈরি করেন আর নাতি তাকে বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য ডেকে তোলে। তার নাতিও ওই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ভাত খেয়েই নাতিকে নিয়ে চলে যান বিদ্যালয়ে। তারপর দুপুরে ছুটি শেষে আবার বাড়ি ফেরেন।

তিনি জানান, এই বয়সে বিদ্যালয়ে যেতে পেরে তিনি খুব খুশি। তেমনি তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েও খুশি।

মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথমে দুইজন বৃদ্ধ তার সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা জানান। এ সময় তিনি জানুয়ারি মাসে তাদের ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনেই একসঙ্গে সাতজন ভর্তি হন। এর তিনদিন পরে ভর্তি হন আরও চারজন। এখানে মোট ১১ জন বৃদ্ধ শিক্ষা গ্রহণ করছেন। নিয়মিত তারা বিদ্যালয়ে আসছেন এবং তাদের শেখার আগ্রহও অনেক। কিছু না পারলে বা না জানলে শিক্ষকদের কাছে বুঝে নেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেনাজুল হায়দার জানান, বয়স বেশি হওয়ায় ভর্তি নেয়া যাবে কি না এ বিষয়ে প্রথমে সমস্যা হয়। পরে শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুকে ভর্তি করার নিয়ম আছে। বয়স বেশি হলে ভর্তিতে কোনো বাধা নেই। তখন ওই বৃদ্ধদেরকে ভর্তি করে নেয়া হয়। এদের মধ্যে ছয়জন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে দ্বিতিয় শ্রেণিতে উর্ত্তীণ হয়েছেন। বাকী পাঁচজন ঠিকমত শিখতে না পারায় আবারও প্রথম শ্রেণিতে থাকতে চান। তাই তারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেননি। তবে তারা নিয়মিত স্কুলে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, এরা সবাই গরীব। তাই সাধারণ শিশুদের মত তাদেরও উপবৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, নিরক্ষরতা দূর করতে বয়স্করা স্কুলে আসছে এটি অনেক আশাব্যঞ্জক। আমরা তাদের সফলতা কামনা করছি।

এমদাদুল হক মিলন/আরএআর/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।