পর্যটকে লোকারণ্য কক্সবাজার

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৭:১৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেষ হয়েছে বার্ষিক পরীক্ষা। চলছে শীতকালীন ছুটি। আবহাওয়াও মন্দ না। এ সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছেন ইট-পাথরের ভেতর যান্ত্রীক জীবন অতিবাহিত করা মানুষ। তাই ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান পর্যটন এলাকা কক্সবাজার। ভীড় বেড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের বালিয়াড়িসহ দর্শনীয় স্থানসমূহে।

পর্যটনে রাতের শহরে এবারও বাড়তি আনন্দ হয়ে যোগ হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। ট্রেন-নৌকা রাইড, শিশু গেমসহ শতাধিক স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে মেলায়। দিনে পর্যটন স্পট আর রাতে ও মেলায় প্রাণচঞ্চল সময় পার করছেন পর্যটকরা।বছরের শেষ সময়ে পর্যটক সমাগম বাড়ায় তারকা হোটেল, পর্যটন মোটেল, গেস্ট হাউসসহ আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবসায়ীরা তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কলাতলী থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে মানুষ আর মানুষ। আবাল বৃদ্ধ-বণিতার ভীড়ে সৈকতে হাঁটাও দুষ্কর। বেড়াতে আসা পর্যটকদের মধ্যে কেউ কেউ সৈকতে হাঁটছেন, কেউবা চেয়ারে বসে গল্পের ফাঁকে সাগরে মিষ্টি হাওয়া উপভোগ করছেন। আবার কেউ কেউ শীতের মাঝেও সাগরে গোসলে মত্ত। অনেকেই বীচ ও ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করছেন ঢেউয়ের নাচন।

কলাতলী হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলামের মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত ও প্রকৃতি অনুকূল থাকায় এবারের মৌসুমটা ভালই কাটছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের। সব বয়সের মানুষ বেড়াতে আসছেন কক্সবাজারে।

tourist

কলাতলী গেস্ট হাউস এলাকার দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইয়ার মুহাম্মদ বলেন, বিজয় দিবসের ছুটির পর থেকে শহর ও সাগরপাড়ের সকল হোটেলের প্রায় সমস্ত কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যায়। চলতি সপ্তাহে শহরের অনেক হোটেল পূর্ণ বুকিং হয়ে আছে। যেসব গেস্ট হাউস আগাম বুকিং হয়নি তারাও ওয়াকিং গেস্ট নিয়ে ভালোই ব্যবসা করছেন। ভ্রমণ পিপাসুরা সমান তালে সেন্টমার্টিন দ্বীপেও ঘুরতে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, শহরের আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও সরকারি রেস্ট হাউসে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার মানুষের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিপুল পরিমাণ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।

তবে অনেকের মতে, কক্সবাজারে পর্যটকদের ভীড়কে পুঁজি করে এক শ্রেণির হোটেল মালিক ও কক্ষ দালাল গলাকাটা ব্যবসা করছে। কিছু কিছু হোটেলে ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা না থাকায় আসল ভাড়ার ৩-৪ গুণ হারে ভাড়া নিচ্ছে ওয়াকিং পর্যটকদের কাছ থেকে।

বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পর্যটক হয়রানি বন্ধে হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় মূল্য তালিকা টানানোর নির্দেশনা দেয়া আছে। পূর্বের সময়ের চেয়েও পর্যটক সেবার প্রতি বাড়তি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। সার্বক্ষণিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পর্যটন এলাকায় টহলে রয়েছে।

পর্যটক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সতর্ক রয়েছে উল্লেখ করে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এইচএম রায়হান কাজেমী জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন স্পটসমূহে নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজার সৈকতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলে পর্যটকদের রাতদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা বিধান করছে পুলিশ।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, বিশ্ব পর্যটনের একটি সম্ভাবনাময় স্থান কক্সবাজার। একে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনেক। কউকের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে সকলের সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যমান সকল অসামঞ্জস্য দূর করে সব হোটেল-মোটেল ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পর্যটক সেবার উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে গড়ার চেষ্টা চলছে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।