৪৮ বছরেও একটি পাকা ভবন পায়নি বিদ্যালয়টি
প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছর পরও অবকাঠামোর উন্নতি হয়নি চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের। ৩টি ভাঙাচোরা টিনের ঘরে চলে এই প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। পুরানো টিনের ভবনে উপযুক্ত সংখ্যক জানালা নেই। যে কয়টি আছে তাতেও নেই পাল্লা। বর্ষা, বৃষ্টির দিনে চাল দিয়ে পানি পড়ে। গরমের দিনে প্রচণ্ড তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। আর এমনই প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে প্রায় ৪শ ছাত্র-ছাত্রীকে প্রতিদিন ক্লাস করতে হচ্ছে এখানে।
জানা গেছে, ১৯৭০ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের চয়ড়া গ্রামে ফরজ আলী ও তার ভাই শাহজাহান আলীর দান করা ৩০ শতক জমির উপর এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম অবস্থায় ছাত্র সংখ্যা কম থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় ক্রমেই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠালগ্নে ৫০ ফুট লম্বা একটি টিনের ঘর দেয়া হয়। পরে ছাত্র সংখ্যা বাড়লে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় স্কুল প্রাঙ্গণে ৬০ ফুট লম্বা আরো দুটি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। এখানে ১৫ জন শিক্ষক ও কর্মচারী রয়েছেন।
১৯৮২ সালে স্কুলটি এমপিওভুক্ত হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী আসবাবপত্রও নেই স্কুলে। উল্লাপাড়ার প্রত্যন্ত এলাকা চলনবিলপাড়ের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গ্রামীন জনপদের বিশেষত অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ নেই এখানে।
চয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহা আলম মিয়া জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দফতরে এই স্কুলে একটি পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা অনেকবার স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে পাকা ভবন নির্মাণের ঘোষণা দিলেও এই দীর্ঘদিনে সে ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ স্কুলটির ফলাফল যথেষ্ট ভালো। গত ৩ বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় এই স্কুল থেকে ৬০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এসব পরীক্ষায় গড় পাশের হার ৯৮ ভাগ।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য নুরুজ্জামান রানা জানান, চয়ড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ থেকে চলতি বছরের বন্যায় ভেঙে যাওয়া একটি টিনের শ্রেণিকক্ষ সংস্কারের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার দেয়া হয়। এই অর্থে টিনের ভবনের নিচে একটি গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়। সেইসঙ্গে ভবনের কিছু সংস্কার কাজও চলে। কিন্তু পাকা ভবন নির্মাণের কোনো অর্থ আজ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, এখানে শিক্ষার্থীরা পাঠগ্রহণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে পাকা ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্কুলটিতে পাকা ভবন নির্মাণ খুবই জরুরি।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর উল্লাপাড়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সালমান ফারসী জানান, উপজেলায় যে কয়েকটি স্কুলে পাকা ভবন নির্মাণ জরুরি তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে ঢাকা অফিসে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে ভবন নির্মাণের যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/পিআর