দেবিদ্বার খাদ্য গুদামে ভুয়া কৃষকের তালিকায় গম ক্রয়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৪৮ এএম, ১২ জুলাই ২০১৫

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার খাদ্য গুদামে গম সংগ্রহে ব্যাপক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। ভুয়া কৃষকের তালিকার মাধ্যমে ক্রয় করা হয়েছে গম। উপজেলার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে গম ক্রয় না করে একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করে ক্রয় করা হয়েছে ২৪ মেট্রিকটন গম।

সরকারিভাবে যেসব কৃষকদের কাছ থেকে কাগজে-কলমে গম ক্রয় করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউই খাদ্য গুদামে গম সরবরাহ করেননি। অনেকের নামও ভুয়া। এছাড়াও ২৪ মেট্রিক টন গম ৮ জন কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় দেখানো হলেও দেবিদ্বারের কোনো কৃষকই এককভাবে ১ টন গম উৎপাদনের তথ্য কৃষি বিভাগের কাছে নেই বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সরকারিভাবে দেবিদ্বার উপজেলায় ২৪ টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। এতে প্রতি টন ২৮ হাজার টাকা দামে দেবিদ্বার খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ ২৪ টন গম কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। কিন্তু এসব গম প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করার বিধান থাকলেও দেবিদ্বার উপজেলার কোনো কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করা হয়নি।

দেবিদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসার উত্তম কুমার কবিরাজ জাগো নিউজকে জানান, গম কেনার জন্য খাদ্যগুদাম থেকে এবার কেউ আমাদের কাছ থেকে প্রান্তিক কৃষকের নামের তালিকা নেয়নি। কৃষি বিভাগের তালিকা অনুযায়ী দেবিদ্বারে এককভাবে কোনো কৃষকের জমিতে এক টন গম উৎপাদন হয়েছে এমন তথ্যও নেই। তাই ৮ কৃষকের কাছ থেকে ২৪ মেট্রিকটন গম সংগ্রহ করার তথ্য সঠিক নয়।

খাদ্য বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, ভুয়া কৃষকের নাম দিয়ে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিছু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তির ভিত্তিতে ২৪ মেট্রিকটন গম সংগ্রহ করেন। কাগজে কলমে আটজন কৃষকের কাছ থেকে গম সংগ্রহ দেখানো হয়েছে। আটজন কৃষকের বাবার নামের মধ্যে তিন জনের বাবার নামই সফর আলী উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও একই পরিবার থেকে ২ জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

গম ক্রয়ের কৃষকের তালিকায় দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের বেগমাবাদ গ্রামের সুনিল সাহার ছেলে দিপক সাহা, গুনাইঘর গ্রামের মো. সাইদীর ছেলে রুহুল আমীন, দেবিদ্বার পৌর এলাকার মৃত. আবদুল কাদেরের ছেলে মো. জামাল হোসেন, বড় আলমপুর গ্রামের শাহজান মিয়ার ছেলে সাইদী, ছেপাড়া গ্রামের আবদুল বারেক মিয়ার ছেলে মনির হোসেন, ভুষনা গ্রামের সফর আলীর ছেলে ইউছুফ ও ডালকারপাড়া গ্রামের একই পরিবারের  সফর আলীর ছেলে সহিদুর রহমান ও অহিদুর রহমানের নিকট থেকে সংগ্রহ দেখানো হয়েছে।

উল্লেখিত কৃষকদের অনেকেই জানেন না তাদের নামে খাদ্য গুদামে গম দেয়া হয়েছে। দেবিদ্বার পৌর প্রশাসক সহায়তা কমিটির ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য ভূষনা গ্রামের মো. মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, গম ক্রয়ে কৃষকের তালিকায় থাকা আমাদের ভুষনা গ্রামে সফর আলীর ছেলে ইউছুফ নামে কোনো কৃষক নেই।

এ ব্যাপারে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, গত বছরের তালিকা থেকে দেবিদ্বার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৮ জন কৃষককে বাছাই করে প্রতি কৃষকের কাছ থেকে ৩ টন করে মোট ২৪ টন গম সংগ্রহ করা হয়েছে, গম সংগ্রহে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গম, ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল এলাকার প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ করার জন্য। কৃষকদের কাছ থেকে গম সংগ্রহ না করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মো. কামাল উদ্দিন/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।