আবারো ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা
উজানের ঢলে তিস্তার পানি আবারো রোববার সকাল থেকে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে নেমে আসলেও রাত ৯টার পর দ্রুত পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। রাত ১২টায় তিস্তা অববাহিকার অনেক বাড়ি কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। উজানের ঢলে রাতে ভয়ঙ্কর রূপে গর্জে উঠেছে তিস্তা। প্রবল স্রোতে শোঁ শোঁ শব্দে রুদ্ধমূর্তি ধারণ করে তিস্তা অববাহিকা এলাকা কাঁপিয়ে তুলছে।
রোববার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র। তিস্তার ভয়াবহ পরিস্থিতির বন্যায় তিস্তা অববাহিকার সহস্রাধিক মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। তিস্তার চর ও নিচু এলাকার ঘরবাড়ির উপর দিয়ে বানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, উজানের প্রচণ্ড ঢলের কারণে তিস্তা ব্যারাজের ২০ কিলোমিটার উজানে তিস্তা নদী দুটি চ্যানেলে রূপান্তর হয়েছে। মূল চ্যানেল কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট ছাড়াও টেপাখড়িবাড়ির চরখড়িবাড়ি দিয়ে নতুন চ্যানেলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার অববাহিকার ২৫টি গ্রামের ৫ সহস্রাধিক পরিবারে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
পাশাপাশি নদী বাম ও ডান তীরের বাঁধ ঘেষে প্রবাহিত হওয়ায় বাঁধের হার্ডপয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তিস্তার ভয়ঙ্কর ঢলের কারণে নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলার কয়েকটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষের ঘরবাড়ি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পরিবারগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
তিস্তার বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো, নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা, লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার বাইশপুকুরচর, কিসামত ছাতনাই, ঝাড়শিঙ্গেরশ্বর, বাঘেরচর, টাবুর চর, ভেন্ডাবাড়ি, ছাতুনামা, হলদিবাড়ী, একতারচর, ভাষানীর চর, পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী, কৈমারী ও লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা ও কালিগঞ্জ উপজেলার তিস্তা অববাহিকার গ্রামগুলোর কাঁচা ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী জানান, তাদের গ্রামের প্রতিটি পরিবারের ঘরে হাঁটু পানির নিচে রয়েছে। ঘরের ভেতর দিয়ে সমান স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম বাইশপুকুর থেকে পূর্ব বাইশপুকুরের ৪ কিলোমিটার বালুর বাঁধটি চরম হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে পূর্ব বাইশপুকুর, পশ্চিম বাইশপুকুর, সতিঘাট, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ীসহ ১০টি গ্রামের কয়েক শত বাড়িসহ সহস্রাধিক বিঘা আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে।
পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জাগো নিউজকে বলেন, তার এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জাগো নিউজকে জানান, কিছামত ছাতনাই চরের ২শত পরিবারকে বসতভিটায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন বলেন, চরখড়িবাড়ী গ্রামের ৩ শতাধিক বাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, উজানের ঢলে তিস্তা পানি বোরবার সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইচ গেট খুলে রাখা হয়েছে।
জাহেদুল ইসলাম/এমজেড/পিআর