মুক্তিযোদ্ধা বারেকের করুণ কাহিনী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

জীবন বাজি রেখে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া রণাঙ্গণের বীর সৈনিক গাজীপুরের শ্রীপুরের উদয়খালী গ্রামের আব্দুল বারেক জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে বসেছেন। গত ৩ বছর যাবৎ চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে দিন কাটছে এ বীর যোদ্ধার।

হতদরিদ্র পরিবারের এ বীর মুক্তিযোদ্ধার দিন কাটছে হুইল চেয়ারে বসে। তার দু’চোখ বেঁয়ে অঝরে ঝরছে জল, তাকিয়ে আছেন শেষ নিয়তির দিকে। যে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে দেশকে স্বাধীন করতে মাইলের পর মাইল হেঁটে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শত্রুর ওপর। আজ স্বাধীন নিজ দেশেই বিনা চিকিৎসায় ধুঁকে ধুঁকে মরতে যাচ্ছেন এ বীর যোদ্ধা।

Gazipur

চিকিৎসায় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা না জুটায় নিজের সহায় সম্বল সবই বিক্রি করে শেষ করেছেন। এখন ভিটে-মাটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আরেকবার অস্ত্রোপ্রচার করলেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন আব্দুল বারেক। কিন্তু সেই সামর্থ্যও তার নেই।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেক জানান, ১৯৭১ সালে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩নং সেক্টর কমান্ডার একেএম শফিউল্ল্যাহ্ ও সেকশন কমান্ডার নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া এ বীর যোদ্ধার বাস হয়েছে এক কুড়ে ঘরে। ঘরে থাকা একটি চৌকির উপর তেল চিটচিটে বালিশের উপর শুয়ে বসে সময় কাটছে এ যোদ্ধার। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জিততে পারলেও জীবন যুদ্ধে হারতে বসেছে আজ। গোসলখানায় পা পিছলে পরে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে এ যোদ্ধা আজ শয্যাশায়ী। তিন ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের সংসারে স্ত্রীও অসুস্থ। তিন ছেলেও কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে একে একে আলাদা হয়ে গেছেন। প্রতিমাসে সরকার থেকে যে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন ওষুধ কিনতেই তা ব্যয় হয়ে যায়।

Gazipur

মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারেকের দ্বিতীয় সন্তান কাজল মিয়া জানান, প্রায় ৩ বছর আগে গোসলখানায় পা পিছলে পড়ে কোমরের জয়েন্টের হাড় ভেঙে যায় তার বাবার। পরে বাবার কৃষি জমি পানির দামে বিক্রি করে দুই দফায় বেসরকারিভাবে চিকিৎসা করা হয়, ভাঙা অংশে লাগানো হয় স্টিলের প্লেট। তাতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। তবুও চিকিৎসা সফল হয়নি। এখন তৃতীয় বার অস্ত্রোপ্রচারের কথা বলছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অর্থের অভাবে এখন আর তা পারছেন না। হাঁটার জন্য প্রতিদিনই কান্নাকাটি করেন তার বাবা।

এ বিষয়ে তেলিহাটি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. আব্দুল আউয়াল মৃধা বলেন, বারেকের শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়। তার চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা চেষ্টা করেও পাইনি। পরে বিভিন্ন সময় নিজেরাই টাকা তুলে তার চিকিৎসায় সহায়তা করেছি। রাষ্ট্র যদি এ বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরা শান্তি পেতাম।

আমিনুল ইসলাম/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।