২২ বছর পর প্রতিষ্ঠাতার নাম পরিবর্তন : মামলা দায়ের
প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২২ বছর পর রাজবাড়ী পাংশা উপজেলার হাবাসপুরের ঐতিহ্যবাহী ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর নাম পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বাদী হয়ে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড. এমএ মাজেদ, অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজসহ ১৪ জন সদস্যের বিরুদ্ধে রাজবাড়ীর বিজ্ঞ পাংশা সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত আগামী রোববার মামলার আদেশ প্রদানের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ড. এম এ মাজেদ এবং অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
মামলায় বলা হয়, প্রখ্যাত জ্ঞান তাপস ড. কাজী মোতাহার হোসেনের নামকরণে ১৯৯৩ সালে পাংশার হাবাসপুরের এই নিভৃত পল্লীতে কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দ্যোগ নেন এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, দানবীর আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জমি ক্রয়সহ কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১৫ মার্চ কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর অর্থায়নে তার নামে প্রতিষ্ঠিত ভবন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা।
ওই কলেজে কর্মরত রাজমিস্ত্রী সোহেল প্রামাণিক জানান, গত ৭/৮ দিন তিনি এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। গত মঙ্গলবার কলেজের টিনসেডের সামনে পুরাতন স্টোনটি তুলে সেখানে একটি নতুন স্টোন স্থাপন করা হয়েছে। আর একাডেমিক ভবনের সামনের স্টোনটি নতুন করেই বসানো হয়েছে।
কলেজ অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আজিজ জানান, কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়ে আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মের এর নাম সম্বলিত স্টোনটি তুলে সেখানে আবু হেনার নাম সম্বলিত স্টোন স্থাপন করা হয়েছে। এখানে তার কিছুই করার নেই।
কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ড.আব্দুল মাজেদ জানান, ঢাকাস্থ হাবাসপুর হাইস্কুল ছাত্র কল্যাণ সমিতির সদস্যরা এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমেদ ছিলেন সমিতির কোষাধ্যক্ষ। যে কারণে তাকে কলেজের ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং তৎকালীন কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মৃত আজিজুল কাদেরের সরলতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে আবু হেনার নাম সম্বলিত স্টোন সরিয়ে আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর নাম সম্বলিত স্টোনটি লাগিয়ে দেন। যে কারণে আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ এর নাম সম্বলিত স্টোনটি সড়িয়ে নতুন করে আবু হেনার নাম সম্বলিত স্টোন লাগানো হয়েছে।
এদিকে, ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা পরিবর্তনের বিষয়ে প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমেদ ৪ জুলাই একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয় গত ২ জুলাই রাতে আমার স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তরটি গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার ও প্রতিষ্ঠাতা থেকে বাদ দেওয়া ও আবু হেনাকে খুশী করার জন্য অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ ও কলেজের সভাপতি আব্দুল মাজেদের যোগসাজশে পুরাতন ফলকটি ভেঙে নতুন ফলক স্থাপন করা হয়েছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দানবীর আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ শুধু ড. কাজী মোতাহার হোসেন কলেজ প্রতিষ্ঠাই করেননি। তারাপুর দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠাতা, কালুখালী ডিগ্রি কলেজ কলেজ ভবন নির্মাণ, আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমদ আদর্শ একাডেমী, আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শাহজুঁই কামিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। এ অবস্থায় নাম পরিবর্তনের আকস্মিক ও রহস্যজনক সিদ্ধান্তে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত।
এনিয়ে প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ শাহাবুদ্দিন আহমেদও ক্ষুব্ধ। তিনি জানান, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ হিসেবে এনিয়ে আইনের আশ্রয় গ্রহণ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
তিনি জানান, গত ২৮ মে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষ বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠান হয়। ব্যারিস্টার শাওন এস নভেল স্বাক্ষরিত ওই লিগ্যাল নোটিশে তাদেরকে দিয়ে এ ধরনের হীন চক্রান্ত থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান হয়। কিন্তু, এরপরও তারা তাদের অশুভ চক্রান্ত অব্যাহত রাখায় অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রুবেলুর রহমান/এমএএস/পিআর