এক নারী ভ্যানচালকের গল্প

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নাটোর
প্রকাশিত: ১১:৫৯ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

ছোট থাকতেই স্বপ্ন দেখতেন- বড় হয়ে সমাজে নিজের একটা পরিচয় তৈরি করবেন। আর্থিক দিক থেকে অন্যের মুখাপেক্ষী না থেকে নিজেই স্বাবলম্বী হবেন।

সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কিছু করার। তাই নেমে পড়েন জীবন সংগ্রামে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা আত্মপ্রত্যয়ী এক তরুণীর নাম বীথি খাতুন। নাটোরের সিংড়া উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা বীথি।

তার সংসারে রয়েছেন বৃদ্ধা মা জয়নব বেগম। তার দেখভাল আর সংসারের দু’মুঠো খাবার জোগাতে বাধ্য হয়ে নিজেই অটোভ্যানের চালক হয়েছেন।

সেই সঙ্গে মাটিকাটা থেকে শুরু করে কঠোর সব পরিশ্রমই করছেন তিনি। এই বয়সে তার স্বামী-সংসার করার কথা থাকলেও শুধু বৃদ্ধা মায়ের কথা ভেবে আর সংসার করা হয়ে উঠেনি। সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অথবা বাসস্ট্যাডে দেখা মিলবে এ তরুণীর।

ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ছোট বীথি। বাবা ইয়াকুব আলী ছিলেন ভ্যানচালক। চার বছর আগে মারা গেছেন। অভাবের সংসারে পরিবারের কোনো সন্তানের স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া সম্ভব হয়নি। তাই জীবিকার তাগিদে কেউ দিনমজুর আবার কেউ গার্মেন্টকর্মী। তাদের অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়াতে ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেন বীথি। নিয়মিত বগুড়ার রনবাঘা বাজার থেকে সিংড়ার বোয়ালিয়া বাজার পর্যন্ত যাত্রী আনা-নেয়া করেন তিনি।

এতে করে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয় তার। এই দিয়ে চলে তার সংসার। পাশাপাশি চলে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ। এমনকি সারা দিন ভ্যান চালালেও যেন ক্লান্তি নেই তার। মায়ের সেবা-যত্ন সময়মতো নিজ হাতেই করেন। সময়মতো খাবার আর ওষুধ খাইয়ে দিতে ভুলেন না বীথি।

এই মায়ের এখন একমাত্র অবলম্বনই তার মেয়ে বীথি। তার এমন কর্মে প্রতিবেশীরা তাকে ভালো দৃষ্টিতেই দেখেন। প্রতিবেশী রহিম, একরাম হোসেনসহ অনেকে জানান, বীথি কখনও বসে থাকেন না। ভ্যান ছাড়াও মাটিকাটা কাজও করেন। পরিশ্রমে তার কোনো ক্লান্তি নেই। এক কথায় অদম্য নারী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীথি বলেন, আমার বাবা মারা যাওয়ার পর মায়ের কথা ভেবে সংসারের হাল ধরি। ৩ ভাই কেউ দেখে না, তিন বোনের মধ্য আমি ছোট, অন্য বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে। এ জন্য মায়ের সেবায় নিজের সংসার করা হয়ে উঠেনি।

বীথির ভাষ্য, এতদিন অন্যের ভ্যান চালিয়ে সংসার চালিয়েছি। কিন্তু পোষায় না। এ জন্য ২ মাস আগে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৪৫ হাজার টাকা লোন নিই। কিস্তির টাকা শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তবুও টানছি জীবনের গ্লানি।

এ ব্যাপারে সিংড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, বীথি সমাজের পরিশ্রমী নারীদের একটা উদাহরণ। এছাড়া বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়ানোর সাহসী নারী তিনি।

বীথির বিষয়ে চলনবিল ফেসবুক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট এমরান আলী রানা ও মহাসচিব মাহাবুব আলম বাবু জানান, সমাজের বিত্তবানদের বীথির পাশে দাঁড়ানো দরকার। কারণ বীথির ভবিষ্যৎ আছে, মায়ের জন্য বীথির ভালোবাসা সমাজের জন্য একটি বার্তা।

এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।