ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা ব্র্যান্ডিং লোগোর ডিজাইন করলেন ডিসি
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের উদ্যোগে ‘আমার জেলা আমার অহংকার’ স্লোগানকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও জেলা ব্র্যান্ডিং লোগো “এই জনপদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আগামীর সম্ভাবনাকে দেখতে পাচ্ছে ঠাকুরগাঁও” এর ডিজাইন করেছেন ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক।
ব্র্যান্ডিং লোগো বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলার স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস ও হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যকে তুলে ধরে কার্যকর ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে জেলাটিকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিত করা সম্ভব। এর ফলে জেলাটির পরিচিতি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান সম্ভাবনা সমূহকে ঘিরে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করলে দেশের সমষ্টিক অর্থনীতিতে কাঙ্ক্ষিত গতির সঞ্চার করবে।
তিনি বলেন, আমরা ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার জনপদ এই ঠাকুরগাঁওকে একটি আদর্শ জেলা হিসেবে গড়ে তুলবো। ব্র্যান্ডিংয়ের লোগো যেহেতু “এই জনপদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে আগামীর সম্ভাবনাকে দেখতে পাচ্ছে ঠাকুরগাঁও” তাই পর্যটনের মধ্য দিয়ে জেলার ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকৃত পক্ষেই ঠাকুরগাঁও জেলা একটি ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার জনপদ। ঐতিহাসিক প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদের্শন, কৃষি, শিল্পায়ন, পর্যটন প্রভৃতি ক্ষেত্রে এ জেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। জেলার ঐতিহ্য ও সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে পর্যটনকে ব্রান্ডিংয়ের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেলায় অর্থনৈতিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করে বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঠাকুরগাঁও জেলা নিরন্তর কাজ করে চলেছে।
লোগোর ব্যাখা
ঠাকুরগাঁও এর ‘ঠ’ অক্ষরটিকে ছয় বার শৈল্পিকভাবে বিন্যাস (compose) করে তৈরি করা হয়েছে লোগোটির মূল ডিজাইন। লোগোটিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি স্লোগান ‘ঐতিহ্য ও সম্ভাবনার জনপদ’ (Thriving Thakurgaon)। ইট বা পোড়া মাটির রং দিয়ে ‘ঐতিহ্য’ এবং গমের শীষের সোনালী রং দিয়ে ‘সম্ভাবনা’ কে বোঝানো হয়েছে। এছাড়াও লোগোর ভেতরে ব্যবহৃত সাদা রংটি এ অঞ্চলের মানুষের শান্তি প্রিয় মানসিকতা এবং দুগ্ধখাতের অপার সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করে।
উল্লেখ্য সারা ঠাকুরগাঁওয়ের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে পুরনো ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এছাড়াও বাংলাদেশে উৎপাদিত গমের এক পঞ্চমাংশই উৎপন্ন হয় ঠাকুরগাঁও জেলায়। ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপাদিত দুধ থেকে তৈরিকৃত মোজারেল্লা চিজ ঢাকাসহ সারা দেশের চাহিদা পূরণ করে।
লোগোটির মূল আকৃতি সূর্যের বিমূর্ত রূপ। তাছাড়া ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে দুইশো বছরেরও অধিক বয়সী বিস্ময়কর প্রাচীন ‘সূর্যপুরী’ আমগাছ। লোগোতে ব্যবহৃত বিমূর্ত সূর্য এই প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি সূর্যপুরীর সাথে অর্থবহতায় সামঞ্জস্যপূর্ণ। উল্লেখ্য যে, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট ০৬টি উপজেলা (একটি উপজেলা অনুমোদনের অপেক্ষায়) ও মোট ০৬টি থানা রয়েছে। লোগোটিতে সমন্বিত ০৬টি ‘ঠ’ অক্ষর একইসঙ্গে এ ছয়টি উপজেলা ও থানাকেও উপস্থাপন করে।
জেলা-ব্র্যান্ডিং কী?
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার কোনো না কোনো বিশেষত্ব রয়েছে। কোনো জেলা পর্যটনের জন্য, কোনো জেলা কোনো পণ্যের জন্যে, আবার অন্য কোনো জেলা হয়তো কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। কাজেই একটি জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিবেচনায় রেখে জেলার সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করে তার স্বাতন্ত্রকে বিকশিত করার লক্ষ্যে গৃহীত সার্বিক কর্ম-পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের যে কর্মযজ্ঞ তা-ই মূলত জেলা-ব্র্যান্ডিং। একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কিছু মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে একটি জেলার নাগরিক সেবাসহ সার্বিক কল্যাণ সাধন জেলা-ব্র্যান্ডিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।
জেলা-ব্র্যান্ডিং কেন?
একটি জেলার চলমান উদ্যোগ এবং সম্ভাবনা সমূহকে বিকশিত করার মাধ্যমে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। ব্র্যান্ডিং প্রতিটি জেলাকে একটি সুনির্দিষ্ট রূপকল্প দেবে, যা গৃহীত কর্ম পরিকল্পনার সুসংগঠিত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই জেলাকে একটি গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। একটি জেলার সর্বস্তরের মানুষের আশা-আকাক্ষা, ঐতিহ্য, গৌরবকে দেশে-বিদেশে ভাস্বর করে তোলার লক্ষ্যে সকলের একাত্ম হয়ে কাজ করার জন্য জেলা-ব্র্যান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
রবিউল এহসান রিপন/এফএ/আইআই