রোকেয়ার পরিবারের সাড়ে ৩শ বিঘা জমি বেদখলে
বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৮৮০ সালের আজকের এ দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দের খোর্দ্দ মুরাদপুর গ্রামের এক সভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩২ সালের আজকের এ দিনেই মারা যান তিনি।
প্রতি বছর বেশ ঘটা করেই এই দিনটিতে বেগম রোকেয়াকে স্মরণ করা হলেও তার জন্মভূমিতে গড়ে ওঠা স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম আজও চালু হয়নি। সেইসঙ্গে বেগম রোকেয়ার পরিবারের বেহাত হয়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা জমি উদ্ধারসহ রোকেয়ার মরদেহ বাস্তুভিটায় সমাহিত করার দাবিও পূরণ হয়নি আজ অবধি।
বিশিষ্ট রোকেয়া গবেষক ও বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জাগো নিউজকে জানান, বেগম রোকেয়া তার নিজের লেখা প্রবন্ধ নার্সনেলিতে লিখেছেন, “আমাদের এই অরণ্য বেষ্টিত বাড়ির তুলনা কোথায়, সাড়ে ৩শ বিঘা লাখেরাজ সম্পত্তির উপর আমাদের সুবৃহৎ বসতবাড়ি।” অথচ তার পরিবারের বিশাল সম্পত্তির মধ্যে বর্তমানে ৩৩ শতক (৫০ শতকে এক বিঘা) জমির উপর ডাকবাংলা, ৩০ শতক জমির উপর স্মৃতি ফলক, ৩ দশমিক ১৫ একর জমি নিয়ে স্মৃতি কেন্দ্র, ১ একর জমিতে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৪৮ শতক জমির উপর বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৮ শতক জমিতে বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৬৬ শতক জমির উপর বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় এবং ৫৮ শতক জমিতে কুটিরশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছাড়া অন্য সব জমি বেদখল হয়ে আছে।
রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, বেগম রোকেয়ার পরিবারের বেহাত হওয়া সম্পত্তিগুলো দেশের সম্পদ। সম্পদগুলো উদ্ধারে ২০১২ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মনজিল মোরসেদ এবং তিনি নিজেই বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। যা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।
বেগম রোকেয়ার ভাই মসিহুজ্জামান সাবেরের মেয়ে পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষিকা রণজিনা সাবের জাগো নিউজকে বলেন, রোকেয়ার পরিবারের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা জমি বেহাত হয়ে গেছে। জমি উদ্ধারসহ বেগম রোকেয়ার মরদেহ তার জন্মস্থানে সমাহিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে ২০০১ সালে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রের উদ্বোধন করলেও নানা জটিলতায় আটকে আছে এর কার্যক্রম। ফলে রোকেয়ার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছে না নতুন প্রজন্ম। বেগম রোকেয়ার প্রকৃত ইতিহাস ও কর্মময় জীবনী নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু করার দাবি উঠেছে সর্বত্র।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল জানান, রোকেয়ার জন্মভূমি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে গড়ে ওঠা স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম আজও চালু না হওয়ায় ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে তিনজন গত জুন থেকে বেতন পেলেও অন্যরা মানবেতর জীবন পাড়ি দিচ্ছেন। রোকেয়ার প্রকৃত ইতিহাস ও জীবনী নতুন প্রজন্মকে জানাতে স্মৃতি কেন্দ্রের কার্যক্রম দ্রুত চালু করার দাবি জানান তিনি।
৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম ও প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে ১৯৭৪ সাল থেকে পায়রাবন্দবাসী রোকেয়াকে স্মরণ করে রোকেয়া দিবস পালন করে আসছেন। সরকারিভাবে ১৯৯৪ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বেশ ঘটা করেই দিবসটি পালন করা হয়।
বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি আজ থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী রোকেয়া মেলা। বেগম রোকেয়া স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন, পায়রাবন্দ জামে মসজিদে মিলাদ মাহফিল, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হবে এ তিনদিন। এছাড়াও রংপুর বেগম রোকেয়া মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বিকেল ৩টায় সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে রোকেয়ার কৃতকর্ম নিয়ে বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নারী জাগরণের অগ্রদূত, সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর। তার বাবা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার, মা রাহাতুন্নেছা সাবের চৌধুরানী। খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে অল্প বয়সে বিয়ে হয় রোকেয়ার। মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি স্বামীকে হারান। জীবদ্দশায় অবরোধবাসীনি, অর্ধাঙ্গী, সুলতানার স্বপ্ন, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য বই লিখেছেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মারা যান। কলকাতার শোদপুরে সমাহিত করা হয় রোকেয়াকে।
জিতু কবীর/এফএ/এমএস