বিচারকের নামে জিডি করলেন ওসি আলমগীর


প্রকাশিত: ১২:২৩ পিএম, ০৭ জুলাই ২০১৫

আলোচিত ওসি আলমগীর এবার রাজশাহীর একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে পবা থানায় জিডি করেছেন। বিষয়টি মঙ্গলবার জানাজানি হলে বিচারিক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  আইনজীবীরা এই ঘটনাকে নজীরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা রেকর্ড না করে এক মাসের বেশি সময় ফেলে রাখায় আদালত পবা থানা পুলিশের ওসি আলমগীরকে তলব করেছিলেন।  ওসি আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন দায়িত্বে অবহেলার কারণে।  কিন্তু তার আগেই থানায় জিডি করে সেই জিডির কপি পুলিশ সদর সার্কেল ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।  ওসি আলমগীর এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর পবা থানার দুর্গা পারিলা গ্রামের এমাজউদ্দিন গত ২ জুন ৯ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৭৯সহ আরো কয়েকটি ধারায় একটি পিটিশন মামলা দাখিল করেন।  রাজশাহীর আমলি আদালত-৪ এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবা থানার ওসিকে অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করে পরবর্তী নির্ধারিত কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।  কিন্তু, পবা থানা পুুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন মামলাটি রেকর্ড না করে ফেলে রেখে বাদীকে ঘুরাতে থাকেন।  মামলা রেকর্ডের জন্য বাদীর কাছে টাকাও দাবি করেন ওসি।

এদিকে, গত ২ জুলাই মামলার নির্ধারিত দিনে আমলি আদালত-৪ এর বিচারক মোহা. সানাউল­াহ বাদীর আইনজীবীর নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটির শুনানি করেন।  বাদীর আইনজীবী আদালতে অভিযোগ করেন, টাকার জন্য ওসি অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেন নি।  সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. সানাউল­াহ আদালতে উপস্থিত কোর্ট জিআরওকে নির্দেশ দেন ওসিকে ফোন দিতে।

জিআরও আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওসি আলমগীরের সঙ্গে ফোন সংযোগ স্থাপন করলে বিচারক ফোন নিয়ে ওসির সঙ্গে কথা বলেন এবং কেন একমাসেও অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড হয়নি তার কারণ জানতে চান।

আদালতের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, এসময় ওসি আলমগীর উত্তেজিত কণ্ঠে আদালতের বিচারকের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন।

আরো জানা যায়, ওসি আলমগীর বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।  এসময় বিচারক ফোন রেখে দিতে বাধ্য হন এবং তাকে পরদিন ৩ জুলাই স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন।  এসময় বিচারক ওসি আলমগীরের বিরুদ্ধে কর্তব্যকাজে অবহেলা ও গাফলতির কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহীর পুলিশ সুপার ও রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর আদেশ লেখেন।  এরপর ওসি ওইদিনই অভিযোগটি মামলা আকারে রেকর্ড করেন।

পুলিশের সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, ৩ জুলাই ওসি আলমগীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. সানাউল্লাহর বিরুদ্ধে পবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।  ডায়েরি নং-১১৯ তাং-৩/৭/২০১৫।

সূত্রগুলো আরো জানায়, তিনপাতার ওই জিডিতে ওসি বিচারকের বিরুদ্ধে তাকে হুমকি দেওয়া  ও ক্ষতিসাধণের সম্ভাব্য অভিযোগ করেছেন।  জিডি রেকর্ড করে ওসি তার কপি সদর সার্কেল ও এসপি অফিসে পাঠিয়ে দেন।  গত ৫ জুলাই ওসি প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেটের খাসকামরায় দেখা করেন এবং পরে আদালতে দাড়িয়ে ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।  

এদিকে একজন সিনিয়র বিচারিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওসির জিডি করার ঘটনা মঙ্গলবার আদালত অঙ্গণে জানাজানি হলে আদালত সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  আইনজীবীরাও এই ঘটনাকে নজীরবিহীন বলে উল্লেখ করেন।

রাজশাহীর পিপি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বলেন, বিচারক যা করেছেন, তা ন্যায়বিচারের স্বার্থেই করেছেন।  তবে বিচারকের বিরুদ্ধে জিডি করার মতো ঘটনা আগে কখনো শোনা যায়নি।  আরো কয়েকজন আইনজীবী বলেন, ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আদালতের কর্তৃত্ব ক্ষুণ্ন হবে।

ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, আলোচিত মামলাটির পরে আদালত থেকে আরো ২২টি অভিযোগ থানায় পাঠানো হয় মামলা রেকর্ডের জন্য।  সেগুলো মামলা আকারে রেকর্ড করা হলেও ইমাজ উদ্দিনের অভিযোগটি কেনো রেকর্ড করতে এতদিন সময় লাগলো ওসি তার ব্যাখ্যায় অনিবার্য কোনো কারণের কথা উল্লেখ করেন নি।

ওসি আলমগীরের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার নেসারুল আরিফ বলেন, আমি আদালতের কোনো আদেশ পাই নি।  বিচারকের বিরুদ্ধে ওসির জিডি করার কথাও তিনি জানেন না।   

উল্লেখ্য, আলমগীর হোসেন বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ওসির দায়িত্বে থাকাকালীন রাজশাহীর তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলকভাবে নাশকতার একাধিক মামলা দায়ের করলে সাংবাদিকরা তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে।  অবশেষে গত ২৭ মে তাকে আরএমপি থেকে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করা হয়।  পরে তাকে পবা থানার ওসি হিসেবে বদলি করা হয়।

শাহরিয়ার অনতু/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।