শাহজালাল সার কারখানায় প্রথম বছরে লোকসান ২৩৯ কোটি টাকা
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে নবনির্মিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ শাহজালাল সার কারখানায় যাত্রা শুরুর প্রথম (২০১৬-২০১৭) অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। প্রথম বছরে কারখানাটির নির্ধারিত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও বিপুল পরিমাণ এই লোকসান ভাবনায় ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের।
তবে এ কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল ইসলামের দাবি, ‘এধরনের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক খাতে নিয়ে যেতে কিছু সময় লাগে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে লোকসান কমে আসবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সার কারখানায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থবছরের জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে কারখানার লোকসান ৪৩ কোটি টাকা।
শাহজালাল সার কারখানা গত বছর উৎপাদনে যায়। চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বছরে উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ৫ লাখ ৮০ হাজার টন। প্রথম বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৯০ হাজার টন। আর গত বছর এই সার কারখানায় মোট ইউরিয়া সার উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৯৩ হাজার টন।
কারখানাটির হিসাব বিভাগ জানায়, প্রতি টন সার বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। গত বছর সার বিক্রি করে আয় হয় ৫৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা। অপরদিকে সার কারখানায় প্রি অপারেটিং, ইন্স্যুরেন্স, ৪৮ জন চীনা বিশেষজ্ঞদের বেতন, কারখানার কর্মকর্তা, কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, পরিবহন ও গ্যাস বিল, প্যাকেজিং সরঞ্জামাদি এবং কেমিকেল ক্রয়সহ অন্যান্য বাবদ ব্যয় হয় ৭৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সার কারখানায় উৎপাদিত সার দেশের বিভিন্ন গুদামে পাঠাতে পরিবহন খাতে খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান বেশি হচ্ছে। ট্রাক মারফত প্রতি টন ইউরিয়া সার পরিবহনে খরচ হচ্ছে ২ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে রেলপথে খরচ হয় ১ হাজার টাকা। নদীপথে আরো কম হবে।
এছাড়া কারখানার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও বিভিন্ন ভ্যাসেলের ক্যাটালিস্টের জন্য আমেরিকা থেকে কেমিকেল আনতে খরচ হচ্ছে। বর্তমানে এই কারখানায় দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৫শ টন সার। একটি কন্ট্রোল বাল্ব না থাকাতে কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না। ওই বাল্বটি আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে কারখানার ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়।
শাহজালাল সার কারখানার হিসাব বিভাগের জিএম (প্রশাসন) আব্দুল বারেক জানান, প্রতি টন সার আমদানিতে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এই সার কারখানায় সার উৎপাদনে বর্তমানে খরচ হচ্ছে টন প্রতি ২০ হাজার টাকা। আগামীতে উৎপাদন খরচ আরো কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ক্রমবর্ধমান সারের চাহিদা বৃদ্ধি ও আমদানি নির্ভরতা কমাতে ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে ৬২ একর জমির উপর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজালাল সারকারখানা নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চার বছরেই সার কারখানাটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। গত বছর থেকে এই সারকারখানা বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়।
ছামির মাহমুদ/এফএ/আইআই