দুই দশকেও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ০৭:১৭ এএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৭
ফাইল ছবি

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়িদের সঙ্গে মধ্য-সত্তর দশক থেকে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। তবে দুই দশকেও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এতে সরকারের ওপর ক্ষুব্দ চুক্তি সম্পাদনকারী জনসংহতি সমিতি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চরিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দুই দশক পূর্ণ হয়েছে। অথচ চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের মাধ্যমে চুক্তির প্রতিটি ধারা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, গত ৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো চুক্তিবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত এ সরকার।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের স্বার্থে চুক্তি পরিপন্থী ও জুম্মস্বার্থ বিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে জুম্ম জনগণ প্রস্তুত। ২০১৬ সালে ঘোষিত ১০ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

এ বিষয়ে সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমস্যার কথা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই ভাবেনি। তার মেধা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সদিচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি হয়েছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় ও রাজনৈতিকভাবে উপলব্ধি করেছেন। শান্তি চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। শান্তি চুক্তির আগে তিন পার্বত্য জেলায় পাকা রাস্তা ছিল কেবল ৫০ কিলোমিটার। উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হতো প্রতি অর্থবছর শুধু ৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা হয়েছে। আর প্রতি অর্থবছর কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলের উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতরের মাধ্যমে আরও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোনো বিভেদ বা দূরত্ব নয়, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পর্যায়ক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। শান্তি চুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে।

রাঙ্গামাটির চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, পার্বত্য চুক্তির কিছুটা অগ্রগতি দেখা যায়। সরকার সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত নিয়েই তা করেছে। এটাকে অবশ্য ভালো দিক বলা যায়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পার্বত্য চুক্তির মূল বিষয়গুলো এখনও অবাস্তবায়িত।

তিনি বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামকে এখনও বেসামরিকীকরণ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। পার্বত্য আঞ্চলিক ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আইন কার্যকর হয়নি। এসব পরিষদে নির্বাচন জরুরি। অথচ নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। পার্বত্য জেলা পুলিশ গঠন করা হয়নি। এছাড়া ভারত প্রত্যাগত ও অভ্যন্তরীণ পাহাড়ি শরণার্থীদের নিজ নিজ জায়গায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। এ লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স থাকলেও কার্যত তা অচল। এসব বিষয় দ্রুত বাস্তবায়ন ও কার্যকর দরকার বলে মন্তব্য করেন রাজা দেবাশীষ রায়।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/আরএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।