ইনানীর নৌ-সম্মেলন বিকাশ ঘটাবে পর্যটন শিল্পের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:১৯ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে বঙ্গোপসাগরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়া। মহড়া উপলক্ষে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম-মেরিটাইম সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এক্সারসাইজ (আইএমএমএসএআরইএক্স) নামে এক সম্মেলন হচ্ছে কক্সবাজারের ইনানীর রয়েল টিউলিপ হোটেলে। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্বে কক্সবাজারের পর্যটন ব্র্যান্ডিং হওয়ার আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আজ সোমবার মহড়ার উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। হেলিকপ্টারে এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যুদ্ধজাহাজগুলোর ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করবেন তিনি।

মহড়ায় ২৩টি সদস্য ও ৯টি পর্যবেক্ষক দেশসহ ৩২ দেশের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ এবং নৌপ্রধান, ঊর্ধ্বতন নৌকর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। ৩২ দেশের সমুদ্র মহড়া উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ প্রশাসন।

পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন জানান, রাষ্ট্রপতির সফর ও বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর প্রতিনিধি সম্মেলন সফল করতে সাদা পোশাকসহ ৩ হাজার পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, আইএমএমএসএআরইএক্স’ সম্মেলনকে উপলক্ষ করে দু’দিনের সফরে রোববার হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজার আসেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বেলা পৌনে ৩টার দিকে উখিয়ার ইনানী সেনাবাহিনীর বে-ওয়াচ হেলিপ্যাডে অবতরণের পর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা দেন। বিকেলে তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান এবং রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ত্রাণ বিতরণ করেন।

Cox-bazer1

সোমবার বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ৩২ দেশের নৌপ্রতিনিধি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন। আজই বিকেল ৪টায় ইনানী থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা ফিরে যাবেন।

সূত্র জানায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের নৌবাহিনীর মধ্যে আঞ্চলিক সম্প্রীতি ও সহযোগিতা জোরদার করতে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এই আন্তর্জাতিক সমুদ্র মহড়ার আয়োজন করছে। আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে সম্মিলিত মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এ মহড়ায় যুদ্ধজাহাজসমূহে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া, দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজ থেকে জরুরি উদ্ধার অভিযান ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ ফিশিং ট্রলার ও জেলেদের অনুসন্ধান, সমুদ্রে জরুরি উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক জাহাজের অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে পোতাশ্রয়ে ফিরিয়ে আনা এবং ফ্লিট রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে।

ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়ামের (আইওএনএস) ২৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কেনিয়া, মালদ্বীপ, মরিশাস, মোজাম্বিক, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সিসিলিস, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তাঞ্জানিয়া, থাইল্যান্ড, তিমুর লেসেথ, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং যুক্তরাজ্য।

পর্যবেক্ষক ৯টি দেশ হলো- চীন, জার্মানি, ইতালি, জাপান, মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস, রাশিয়া এবং স্পেন।

জানা যায়, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশসমূহের মধ্যকার মেরিটাইম সিকিউরিটি নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়ন, সন্ত্রাস ও চোরাচালান দমনসহ বিভিন্ন পেশাগত সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান ওশান নেভাল সিম্পোজিয়াম (আইওএনএস) প্রতিষ্ঠিত হয়।

Cox-bazer1

নৌপ্রতিনিধিদের এ সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছোট-বড় অনেক জাহাজ ইনানী রেজুখাল বরাবর গভীরসাগরে নোঙর করে আছে। বঙ্গোপসাগরে আসা বিদেশি জাহাজগুলো দিয়ে আগত নৌবাহিনীর সদস্য ও রাষ্ট্রীয় অন্যান্য অতিথিদের গন্তব্যে আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে উখিয়া-রামুর রেজু খালের মোহনায় দৃষ্টিনন্দন ২টি কাঠের বেইলি ব্রিজ ও বালি দিয়ে বিশাল একটি দ্বীপ তৈরী করা হয়েছে।

বিভিন্ন কারুকাজে সজ্জিত করা হয়েছে পুরো এলাকা। সাগরের গভীরতা নির্ণয় করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে বয়া। অব্যাহত রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রম। সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় ছোট বোটগুলোকে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। নানা বিষয়ের উপর নৌ-সদস্যরা রিহার্সেল করে নিজেদের ঝালাই করে নিয়েছেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের দু’পাশে দেয়া হয়েছে নানা রকমের ব্যানার পেস্টুন। দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে সম্মেলন স্থল।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক এ নৌ-সম্মেলন কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশে অনেকটা ভূমিকা রাখবে। বিদেশি প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হবে। লাভবান হবে পর্যটন শিল্প। বিদেশি অতিথিরা পর্যটন স্থান হিসেবে কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে দেবেন সর্বত্র। তাই এ সম্মেলন পর্যটন বিকাশে কক্সবাজারের ব্র্যান্ডিং হিসেবে ধরা যায়।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।