রমজানে ব্যস্ত ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রামগুলো


প্রকাশিত: ০৫:৫৯ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৫

ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকটি গ্রামের প্রায় সবারই পেশা মুড়ি ভাজা। কথা বলারও যেন নেই ফুরসত। রোজার মাসের মুড়ির চাহিদাকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রামের নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও। মুড়ির গ্রাম খ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ের মহব্বতপুর, হরিনারায়নপুর, গিলাবাড়ি গ্রামে গিয়ে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।  

এখানকার প্রায় সব বাড়িতেই এখন মুড়ি ভাজার ধুম। ‘গীগজ’ ধানের মুড়ি। যার খ্যাতি সর্বত্র। রমজান মাস এলেই হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায়।

অর্ধ শতাব্দীরো অধিক সময় ধরে মুড়ি ভেজে জীবনধারণ করে আসছেন ঠাকুরগাঁওয়ের এই কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার। আগে এর সংখ্যা আরো বেশি থাকলেও নানান সীমাবদ্ধতায় এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকে।

এ বছর মুড়িকে আকর্ষণীয় ও আকারে বড় করতে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছেন ক্ষতিকারক হাইড্রোস। আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছেন না ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম মহব্বতপুর, হরিনারায়নপুর, গিলাবাড়ির পাঁচ শতাধিক নারী ব্যবসায়ী।

অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসেই মুড়ির চাহিদা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ির পাঁচ শতাধিক নারী এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোরে মুড়ি ভাজার কাজ শেষ করেই পায়ে হেঁটে মাথায় মুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন এগ্রাম-ওগ্রাম আর কেউবা শহরে।

গিলাবাড়ি গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ী গীতা রানী জাগো নিউজকে বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক। কিন্তু পুঁজির অভাবে ঠিকমতো মুড়ি সরবরাহ করতে পারছি না। জয়তী রানী জানান, ভোর থেকে মুড়ি ভাজি, সকাল সাড়ে ৬টায় বাড়ি থেকে বের হই। শহরের বিভিন্ন পাড়া, মহল্লায় মুড়ি বিক্রি করি।

কিন্তু পুঁজির অভাব ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পালা দিয়ে টিকতে পারছেন না এ গ্রামের নারীরা। তাদের তৈরি ভেজাল মুক্ত মুড়ির চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছেন না তারা। আর কেউবা ব্যবসায় টিকতে না পেরে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

হরিনারায়ণপুরের সাবিতা সেন জাগো নিউজকে জানান, মুড়ির চাল কিনে বাড়িতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর লবণ দিয়ে রাখি। তারপর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজতে হয়।

আর মেশিনে যারা মুড়ি ভাজেন তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করেন। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর।

সুব্রত চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বেশিরভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি থেকে মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ দিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়।

এদিকে রজমানকে সামনে রেখে মুড়ির কারখানাগুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুড়িতে মেশাচ্ছেন ক্ষতিকারক হাইড্রোজ নামে একধরনের পাউডার। মানবদেহে এটি ক্ষতিকারক জেনেও ব্যবসা করার জন্যই তা মেশাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর দুটি মুড়ির কারখানাতেই দেদারছে মুড়িতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া-হাইড্রোস ।

ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর জেড অ্যান্ড জেড মুড়ির কারখানা মালিক রবিউল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, মুড়িতে হাইড্রোজ মেশানো স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু জনসাধারণ পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছেন না। তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন অফিসের স্যানিটারি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক মুড়িতে হাইড্রোস মেশানোর কথা শোনেননি। তবে মুড়িতে হাইড্রোস মেশালে মুড়ি সাদা ও আকারে বড় হয় বলে জানান। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকার বলে জানান তিনি।  

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যেকোনো রাসায়নিক পদার্থ কোনোভাবেই হজম হয় না। সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের দেহে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনি রোগের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

এমজেড/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।