নামের মিল থাকায় বিনা দোষে জেলহাজতে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

নামের মিল থাকায় অপরাধ না করেও বিনাদোষে কারাগারে রয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মোচাগড়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে অসহায় ইউনুস মিয়া (৫৩)।

গত ৭ নভেম্বর রাতে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পরদিন কারাগারে প্রেরণ করে। অপর ইউনুস মিয়া ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের রজব আলীর ছেলে। তিনি চট্টগ্রামে থাকেন এবং চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রামে বসবাসকারী কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের (বাদশা গাজী ফকির বাড়ি) রজব আলীর ছেলে ইউনুস মিয়াকে ৩৯৫/৪১২ ধারার অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করে।

তার বিরুদ্ধে ওইদিন চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা (নং- ২৭) হয়। ওই মামলায় ইউনুস মিয়া দীর্ঘ আড়াই বছর জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন।

মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রামের বিশেষ দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। গত ১০ আগস্ট আদালতের বিচারক ইউনুস মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আদালতের ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় পৌঁছানো হয়।

গত ৭ নভেম্বর রাতে মুরাদনগর থানার এসআই জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার মোচাগড়া গ্রামের ৫নং ওয়ার্ডের রজব আলীর ছেলে ইউনুস মিয়াকে (৫৩) তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে শনিবার পর্যন্ত বিনাদোষে ইউনুস মিয়া কারাভোগ করছেন।

স্থানীয়দের দাবি, যাচাই-বাছাই ও তদন্ত না করে ৫নং ওয়ার্ডের ইউনুস মিয়াকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং এ ঘটনায় এলাকার লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশের এসআই জালাল উদ্দিন জানান, মামলার এজাহারে আসামি ইউনুস মিয়ার ঠিকানায় মোচাগড়া গ্রামের ‘বাদশা গাজী ফকির বাড়ি’ উল্লেখ থাকলেও গ্রেফতারি পরোয়ানায় গ্রামের নাম শুধু মোচাগড়া লেখা ছিল, ওয়ার্ডের নাম ছিল না। তাই আসামির নাম, বাবার নাম ও গ্রামের নামে মিল থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানার নাম-ঠিকানা অনুযায়ী ইউনুস মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এর বেশি কিছু আমার জানা নেই।

যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, যাচাই করে দেখেছি- এ ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামের ৫নং ও ৬নং ওয়ার্ডে ইউনুস মিয়া নামে দুইজনের বাবার নাম সঠিক আছে। তবে এ গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের বাদশা গাজী ফকির বাড়ির রজব আলীর ছেলে ইউনুস মিয়া বাড়ি-ঘর বিক্রি করে দীর্ঘ বছর যাবত চট্টগ্রামে স্বপরিবারে বসবাস করে, তাকে এলাকায় আসতে দেখা যায় না।

গ্রেফতার ইউনুস মিয়া আগে চট্টগ্রামে থাকতো, ২০০১ সাল থেকে সে মুরাদনগরে লেপ-তোষকের ব্যবসা করে আসছে। সে বিনাদোষে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করলে বিষয়টি হবে দুঃখজনক। এ ব্যাপারে তিনি মানবিক কারণে আইন সহায়তাকারী সংস্থা কিংবা মানবাধিকার সংগঠনের হস্তক্ষেপের দাবি জানান।

কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট সৈয়দ তানভীর আহমেদ ফয়সাল জানান, উভয় ইউনুস মিয়ার পৃথক ভোটার তালিকা অথবা ইউপি চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যের প্রত্যায়নপত্র বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা গেলে এর সুরাহা হতে পারে।

মো. কামাল উদ্দিন/এএম/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।