নিজের নামই লিখতে পারে না টিটু, দাবি পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ১১:৫৩ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৭

মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার ঘটনায় অভিযুক্ত টিটু রায় গত সাত বছর ধরে গ্রামছাড়া। স্থানীয় গ্রামের মানুষদের কাছ থেকে ও এনজিও থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে না পেরে নিজ বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান টিটু।

এছাড়াও দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন তিনি। গ্রামের বাড়িতে বিধবা মা ও ছোট ভাই বিপুলের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগও করতেন না টিটু। শনিবার দুপুরে টিটুর মা জীতেন বালা, ছোট ভাই বিপুলসহ স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এছাড়া শুক্রবারের হামলার ঘটনা পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ ঠাকুরবাড়ি গ্রামে স্থানীয় মুসল্লি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনায় ৮টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরসহ লুটপাট করা হয়।

jagonews24

টিটুর ছোট ভাই বিপুল জানান, দুই ভাই মিলে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলে কয়েকদিন গিয়েছিলেন। একদিন এক শিক্ষক টিটুকে মারধর করায় সেদিন থেকে সে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয়। টিটু নিজের নামটাও লিখতে পারে না বলে দাবি করেন বিপুল।

এদিকে বিপুলের মা জীতেন বালারও দাবি, টিটু হাতেগোণা কয়েকদিন স্কুলে গিয়েছিলেন। ফেসবুক কী তা নিজে না জানলেও তার ছেলে এটা ব্যবহার করতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি।

জীতেন বালা আরও জানান, প্রথম বিয়ে করার পর স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামেই ছিলেন টিটু। সাত বছর আগে ঋৃণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে নারায়নগঞ্জ চলে যান। সেখানে গিয়ে আরও একটি বিয়ে করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। টিটু সেখানে কি কাজ করেন তাও সঠিকভাবে জানেন না এবং সাত বছর ধরে তার কোনো খবর নেন না বলে জানান জীতেন বালা।

টিটুর বাড়ি সংলগ্ন গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে তামাকের ব্যবসা করছেন রতন রায়। ঘটনার দিন তার গুদাম ঘরও ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। তিনি এ ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিল একটি মহল। শুক্রবার পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। কর্মসূচি শেষ করার পর অতর্কিতভাবে আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও ধানক্ষেত দিয়ে হাজার হাজার লোক ঠাকুরবাড়ি গ্রামের দিকে আসতে থাকে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ ঘটনার ইন্ধনদাতা কারা? এ বিষয়ে জানতে চাইলে রতন তাদের চিনেন না বলে জানান। তবে এ হামলার সঙ্গে বহিরাগত লোকজন জড়িত বলে তিনি মনে করছেন।

টিটুর প্রতিবেশী নিবারন রায় গত ৬/৭ বছর ধরে টিটুকে গ্রামে দেখেননি বলে দাবি করে বলেন, সে ঋৃণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আর আসেনি। তিনিও এ ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেন।

এদিকে, টিটুর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে দেখা যায়, এমডি টিটু নামে টিটু রায়ের ছবি দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে গত ১৯ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মহানবীকে (সাঃ) নিয়ে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে টিটুর ছোটভাই বিপুলের কাছ থেকে পাওয়া টিটুর মুঠোফোনে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

jagonews24

এদিকে, শনিবার বেলা ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর একটি মহল দেশকে নানাভাবে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আগামী নির্বাচন ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য তারা বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। এসময় দিনাজপুর-১(বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে রংপুর পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এ হামলার ঘটনায় কারা জড়িত তা স্পষ্ট। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া এলাকার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায়ের ফেসবুকে স্ট্যাটাস ঘিরে গত কয়েক দিন ধরে ওই গ্রাম ও আশপাশ এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ ঘটনায় গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের লালচান্দপুর গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে টিটু রায়কে আসামি করে ৫ নভেম্বর গঙ্গাচড়া থানায় মামলা করেন।

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ওই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে গত মঙ্গলবার পাগলাপীর এলাকায় বিক্ষোভ হয়। ওই দিন বিক্ষোভ সমাবেশে কয়েকশ মানুষ ছিলেন। বিক্ষোভের পর তাকে (টিটু) গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়।

পরে পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে তাকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে দেয়া হয়। এরপরেও সে গ্রেফতার না হওয়ায় এরই প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর স্থানীয় মুসল্লিরা একজোট হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এসময় ওই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আশেপাশের কয়েক হাজার মুসল্লি যোগ দেন।

এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ মুসল্লি ও গ্রামবাসী ঠাকুরপাড়ার ৭/৮টি বাড়িতে অগ্নিযোগ ও রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।

এসময় পুলিশ বাধা দিলে মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে হাবিব (২৭) নামে এক স্থানীয় যুবক নিহত ও পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হাবিব ওই এলাকার একরামুল হকের ছেলে। আহতদের মধ্যে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জিতু কবীর/এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।