বেরিয়ে আসলো ছাত্রলীগ নেতা শাওন হত্যার রহস্য
চোরাচালানে বাঁধা দেয়া, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখা এবং পথের কাটা দূর করতেই ছাত্রলীগ নেতা শাওনকে হত্যা করেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেট। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ বাসস্ট্যান্ড থেকে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। পরে হাত-পা বেঁধে গুলি করে হত্যার পর মরদেহ কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন সংচাইল এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। শাওনকে বাড়ি থেকে বের করে আনতে শাওনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাসেলসহ ৩ বন্ধুকে ব্যবহার করা হয়।
ঘাতক রাসেলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে। শুক্রবার কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব দেবনাথের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে ঘাতক রাসেল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুমিল্লা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পানিয়ারুপ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের ছেলে আজমীর হোসেন শাওন। সে কসবা টি.আলী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। স্থানীয় একটি চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের ব্যবসায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাওন। তাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় ওই সিন্ডিকেটটি। চলতি বছরের গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃংখলা বাহিনী পরিচয়ে কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয় শাওনকে।
পরদিন হাত-পা বাঁধা গুলিবিদ্ধ মরদেহ দেবিদ্বার উপজেলার সংচাইল এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। ওই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয় ৪ ঘাতক। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নিহত শাওনের বন্ধু রাসেল ভূইয়া। সে মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের রবি ভূইয়ার ছেলে।
যেভাবে হত্যার রহস্য বের হয়
এ হত্যার নেপথ্যে কারা রয়েছে এমন প্রশ্ন যখন সবার মনে তখন পুলিশ সুপারের নির্দেশে স্পর্শকাতর এ মামলাটি কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। মামলার দায়িত্বভার পেয়ে রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম এ হত্যায় সরাসরি অংশ নেয়া ঘাতক মো. রাসেলকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ উপজেলার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। পরে রাতভর ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য। চোরাচালানে বাঁধা দেয়ায় একটি সিন্ডিকেটের নির্দেশে রাসেলসহ অন্যান্যরা পরিকল্পিতভাবে শাওনকে অপহরণের পর গুলি করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। সে শুক্রবার আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে বলে আদালত ও ডিবি সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম বলেন, মামলাটি ডিবিতে আসার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় শাওনের আত্বীয়-স্বজন, এলাকার লোকজন, শাওনের মোবাইলসহ সন্দেহবাজনদের মোবাইল কল লিস্ট পর্যালোচনা এবং অনেকের সঙ্গে কথা বলে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। ঘাতক রাসেলকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিবরণসহ অন্যান্য ঘাতকদের নাম প্রকাশ করেছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর আসামিদের গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারসহ নেপথ্যের নায়কদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কামাল উদ্দিন/এফএ/জেআইএম