অবশেষে চিকিৎসা পেল রুগ্ন সিংহটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৫:৩৫ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৭

তেমন দর্শনার্থী নেই চিড়িয়াখানাটিতে। অনেকটা পরিত্যক্ত বাড়ির মতো। অধিকাংশ খাঁচা শূন্য পড়ে আছে। বর্তমানে ৮টি বানর, ৩টি বনমোরগ, ৩টি হরিণ রয়েছে। সবথেকে খারাপ অবস্থা একমাত্র সিংহ ‘যুবরাজের’। যেকোনো সময় মারা যেতে পারে সিংহটি। এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

সিংহটির এমন মুমূর্ষু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। তুমুল সমালোচনার মুখে মঙ্গলবার চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল মান্নান, জেলা ভেটেনারি সার্জন ডা. নাজমুল হক, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার ও সদর উপজেলার ভেটেনারি সার্জন ডা. জাকির হোসেন।

চিড়িয়াখানা থেকে ফিরে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে জানান, রুগ্ন সিংহের চিকিৎসার জন্য ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছিল। আমরা সিংহের খাবার ও চিকিৎসার বিষয়ে নিয়মিত খোঁজ রেখেছি। আগে সে দৈনিক ৬ কেজি গরুর মাংস খেতে পারত, এখন বেশি খেতে পারে না, তাই শুধু মুরগির মাংস দেয়া হচ্ছে। সিংহটি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছে বলেও তিনি দাবি করেন।

lion

প্রতিষ্ঠার প্রায় ৩১ বছরেও বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে পারেনি কুমিল্লা চিড়িয়াখানা। বর্তমানে এ চিড়িয়াখানার এতটাই নাজুক অবস্থা যে এতে রুগ্ন সিংহের খাঁচায় বিড়াল অবস্থান নিয়েছে।

১৯৮৬ সালে কালিয়াজুরি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে ১০ দশমিক ১৫ একর ভূমিতে গড়ে ওঠে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা পরিষদ। আর এ দোটানায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কাঙ্ক্ষিত কোনো উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি চিড়িয়াখানাটিতে। নতুন পশুপাখি আনা না হলেও অবহেলা-অনাদরে যা কিছু এখন আছে সবই জীর্ণ ও রুগ্ন।

চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থী না থাকলেও বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসা প্রেমিক যুগলদের আয় দিয়েই কোনোমতে তা রক্ষণাবেক্ষণ করছেন ইজারাদার। খাদ্য ও দেখভালের অভাবেই বর্তমানে সিংহের এ রুগ্ন দশা বলে অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুকে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠায় তদারকি প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ এখন সিংহের বয়স ও বার্ধক্যকেই দায়ী করেছেন।

lion

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, কুমিল্লার মতো বড় শহরের চিড়িয়াখানার এই বেহাল অবস্থা দুঃখজনক। এটি মেনে নেয়া যায় না। চিড়িয়াখানার সংস্কার ও পশু-পাখি দিয়ে নতুন করে সাজানো এখন সময়ের দাবি।

লিজ নেয়া অংশীদারদের একজন রায়হান হাসানাত। তিনি বলেন, লিজ ও পশু-পাখির খাবার মিলিয়ে বছরে ১৯ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু পশু-পাখি না থাকায় দর্শনার্থী তেমন আসছে না। এতে আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।

কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক জানান, বাড়তি বয়স নিয়ে সিংহটি এখন বোনাস সময় পার করছে। তবুও ওকে বাঁচিয়ে রাখতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিড়িয়াখানার কিছু উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

কামাল উদ্দিন/এফএ/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।